নেত্রকোনায় ১ মাসের মধ্যে দুটি নৌ দুর্ঘটনায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার কলমাকান্দা উপজেলার গুমাই নদীতে নৌকাডুবিতে শিশু ও নারীসহ ১০ জন এবং এর আগের মাসের ৫ আগস্ট মদন উপজেলায় ট্রলারডুবিতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। কলমাকান্দার গুমাই নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বালুবোঝাই ট্রলারটির মাঝিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এছাড়া ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের ডুবুরি এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গুমাই নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী মধ্যনগরের মাছ ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন জানান, নৌকার সারেং ছিল ছোট্ট একটি ছেলে। নদীর পাড় থেকে একজন যাত্রী ডাক দেয়ায় নৌকাটি হঠাৎ করে ঘুরিয়ে ফেলতেই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি বালুবাহী ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কায় নৌকাটি উল্টে যায়। আমি জানালা দিয়ে বের হয়ে আসার সময় এক নারী আমার পা ধরেন। তবে খুব জোরে পা ছাড়িয়ে বের হয়ে দেখি সবাই পানির নিচে। এরপর আর কিছুই জানি না।
ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে বেঁচে যাওয়া সুনামগঞ্জের ইনাতনগর গ্রামের ওয়াহাব আলী বলেন, নৌকায় আমার দুই সন্তান ও স্ত্রী ছিল। চোখের সামনে এক মুহূর্তে ছেলেমেয়ে-স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলি। জানালা দিয়ে বের হয়ে আসি। ঘটনাস্থলের কাছে নয়াপাড়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন ও মো. শাহীন বলেন, নৌকাটির দুই পাশে স্টিলের হওয়ায় তা সহজে উল্টে গেছে। কাঠের হলে উল্টে যেত না। তারা আরও বলেন, চেমটি রানীগাঁও গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেনের নৌকাটি ২০০৩ সালেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। সে সময় এক নারীসহ তিনজন মারা যান। নৌকাটি মজবুত না হওয়ায় এবং আকারে ছোট্ট হওয়ায় প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, কলমাকান্দা উপজেলার রাজনগর এলাকার গুমাই নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ১০ জনের লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।
আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া তথ্যমতে নিখোঁজরা হলেন- ইনাতনগরের ওয়াহাব আলীর মেয়ে মনিরা আক্তার খাতুন (৫), আবদুল হান্নানের ছেলে রতন মিয়া (৩৫), ফাতেমা আক্তার (৪৫), মোফাজ্জল হোসেনসহ ১২ জন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে কলমাকান্দা থানায় ওসি মো. মাজহারুল করিম জানান, এ ঘটনায় দুই সন্তান ও স্ত্রী মারা যাওয়ায় কলমাকান্দা উপজেলার ইনাতনগরের ওয়াহাব আলী ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বালুবাহী ট্রলারের মাঝিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, লাশ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনও এলাকার মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ গুমাই নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে নেমেছে। বুধবার রাতে নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে আহ্বায়ক ও কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ওসি মো. মাজহারুল করীম, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।