ঘর ছাড়া ক্ষেতে গেলেই মিলছে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট। আর এমনই পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেনা শিক্ষার্থী, কর্মজীবিসহ সাধারণ মানুষ। যে কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে গ্রামীণফোনের ভঙ্গুর অবস্থার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা একধাপ পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গ্রামীণফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি থাকায় ইন্টারনেট বিড়ম্ভনার শিকারও হচ্ছেন বেশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষই।
জানা যায়, ময়মনসিংহ অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী এমনটা ভেবেই বেশিরভাগ মানুষ গ্রামীণফোন ব্যবহার করছে। কিন্তু গ্রামীণফোন ব্যবহার করে উল্টো মহা বিপদে পড়ছে এসব ব্যহারকারীরা। অনেক শিক্ষার্থী গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটের স্পীড বা নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে করোনাকালীন সময়ের অনলাইন ক্লাশে অংশ নিতে পারছে না। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে কাঙ্খিত ইন্টারনেট সেবা পেতে ঘর ছেড়ে খোলা মাঠ বা ক্ষেতে যেতে হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য।
প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ করলেও সেই ইন্টারনেটের জন্য জীবন যাত্রা আরো কঠিন হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষের। এখনও অনেক গ্রামে ইন্টারেটের সুফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থী, কর্মজীবিসহ সাধারণ মানুষরা।
ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুবই খারাপ এমন অভিযোগ আসলে ময়মনসিংহ লাইভ সরেজমিনে অনুসন্ধান চালায়। এতে অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পাওয়া যায়। অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাশ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি স্থানের ন্যায় অনুসন্ধান চালানো হয় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ও জাটিয়া ইউনিয়নে। এই দুটি এলাকায় অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটও থাকেনা। বিদ্যুৎ যাওয়ার সাথে সাথেই এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের গ্রামীণফোন গ্রাহকরা নেটওয়ার্কসহ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। পরে বিদ্যুৎ আসলেও নেটওয়ার্ক সচল হতে সময় লাগে আরো কিছুক্ষণ। গত কয়েকমাসে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এমনকি অনেক গ্রাহক গ্রামীনের সিম বদলে অন্য অপারেটরে মাইগ্রেট করছেন। সরিষা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কারণে অনলাইনে ক্লাশ করতে পারছে না। অনেক শিক্ষার্থীকে ঘর ছেড়ে ক্ষেতে গিয়ে অনলাইনে ক্লাশ করতে হচ্ছেে। এই গ্রামের অধিকাংশ গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীই একই সমস্যায় ভুগছেন বলে জানা যায়। ঘর ছেড়ে ফসলি জমিতে (ক্ষেতে) গিয়ে কথা বা ইনটারনেট ব্যবহার করতে হয় বলেও জানান অনেকে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে যাওয়া হয়, সরিষা ইউনিয়নের কুর্শিপাড়া নতুনবাজার ও জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া বাজারে। সুটিয়া বাজারের গ্রামীণফোনের নির্দিষ্ট টাওয়ার রয়েছে। সেখানে বিদ্যুত চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেটও থাকেনা বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কুর্শিপাড়া বাজারের মেকানিক মুস্তাকিম জানান, আমার দোকান থেকে গ্রামীণফোনের টাওয়ার ২০০ গজ দূরে। অথচ নেটওয়ার্ক ঠিকমতো পাওয়া যায়না। মাছিমপুর গ্রামের নাজনীন সুলতানা জানান, ঘর ছেড়ে ক্ষেতে গেলে ৩জি ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
মনির হোসেন নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকায় গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটের এই অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। আমি বাধ্য হয়ে এখন অন্য অপারেটরের সিম কিনেছি। তবে গত প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রামীণ সিম ব্যবহার করে আসায় হঠাৎ সিম বদলানোয় জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই খুঁজে পায় না। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ কেন্দ্রিক একটি জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৯.৮ ভাগ লোকই গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভূগছেন। ৪জি ইন্টারনেট স্পীড দূরের কথা অনকে ২জি স্পীডও পাচ্ছেনা। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মতে, বাসার ভেতরে বা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে গ্রামীণফোনের ইন্টারেনেট ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। এমনকি কথা বলার ক্ষেত্রেও কল ড্রপ হয়। জরিপে অংশ নেয়া এমন কিছু ব্যক্তির বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো-
ফজলুল হক ভূঁঞা নামে নান্দাইলের এক সাংবাদিক জানান, নান্দাইল উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ধূরুয়া ও কুকাটি গ্রামে কোনক্রমে ঘর থেকে বের হয়ে কথা বলা যায়, তবে ইন্টারনেটের স্পীড নাই বললেই চলে। গ্রামীণফোন-বাংলালিংক কি করে?
গৌরীপুর উপজেলার মাইজহাটি গ্রামের আল-আমিন জানান, আউটডোর মোটামুটি, ইনডোর নেটের অনেক বেহাল অবস্থা।
ময়মনসিংহ সদরের ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গ্রাম চর বিলাতে ৪জি নেট হারিকেন জালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন আকরামুল ইসলাম।
জাহিদ আলম সোহান নামে এক ডাক্তার ময়মনসিংহ সদরের ভাটি দাপুনিয়া থেকে জানান, Not upto the mark I would say, net is very slow inside home and slow in outside.
ময়মনসিংহ সদরের সানকিপাড়া এলাকা থেকে কৃষিবিদ ড: মোবারক হোসেন জানান, Very annoying inconsistent internet and network.
হালুয়াঘাট উপজেলার ধারার কয়রাহাটি এলকার নাইদ জানান, আমাদের বাড়িতে গ্রামীণের স্পিড ২০১০ সালে যেমন ছিলো, এখনো সেই রকমই আছে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও রেডিওলজী বিভাগরে প্রধান নাজমুল আলম খান জানান, ময়মনসিংহ শহরের চড়পাড়ার
প্রান্ত স্পেশালাইজড হসপিটালে ঢুকলেই জিপি নেটওয়ার্ক থাকেনা।
আরিফুল ইসলাম নামে একজন জানান, ডায়ালগ দেয় চলো বহুদূর, কিন্তু বেশি ধূরে না! মাঝে মাঝে যাই শ্বশুড় বাড়ি, জামালপুর জেলার পিয়ারপুর, সেখানে ইন্টারনেটতো দূরের কথা ঠিকভাবে নিটওয়ার্কই পাওয়া যায়না।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া শফিকুল ইসলাম জানান, বেতবাড়ি নতুন বাজার মহিলা মার্কেটে ইন্টারনেট পাওয়া যায়না।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের নিজবানাইল গ্রামের মো: আল আমিন খান জানান, কোনক্রমে ঘর থেকে বের হয়ে কথা বলা যায়, তবে ইন্টারনেট সংযোগ ঘরের ভেতর পাওয়া যায়না বলেই চলে।
সুস্মিতা বিনতে শেফালী জানান, ঘরের ভেতর কোন নেট পাওয়া যায়না, ইন্টারনেটতো দূরে থাক, কথাই বলা যায়না।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের তাতকূড়া পূর্বপাড়ার মো শহীদুল ইসলাম জানান, ঘরে ও বাহিরে কোথাও থেকে নেট পাওয়া যায়না।
ফুলবাড়িয়ার শবগঞ্জের কালারচর এলাকার নাজমুস সাকিবা কহিনূর জানান, গ্রামের ঘরে নেট থাকে না।
ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়ার জীবন নাদের একজন জানান, ঘরে বসে কথা বলা যায়না, নেটতো দূরের কথা।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার আমু কান্দার প্রান্ত পাভেল জানান, ঘরের ভেতর একদম ২জি আসে, নেট চালু হতে চায়না।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পুরাতন সিনেমা হল রোডে ঘরের ভেতরে ২জিও পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ করেন মনন আপন।
এরকম আরো অনেকেরই গ্রামীনফোনের নেটওয়ার্ক নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গ্রামীণপোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা আরো উন্নত করা না হলে গ্রামীণফোনের অতীত ঐতিহ্য ও মান দিনের পর দিন নষ্ট হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন এমনটি মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।