নির্বাচনের বাকি মাত্র তিনদিন। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়তে চায় দলটি। ফলে যে কোন ভাবেই ক্ষমতায় যেতে চায় দলটি। এজন্য যা যা করার দরকার সবই করছে তারা। ধানের শীষের প্রার্থীদেরকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের টার্গেট এখন ১৫১ আসন। নানা হিসাব-নিকাশের পর নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে ক্ষমতায় যাওয়ার ন্যূনতম সংখ্যাটি বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এ আসন নিয়েই টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়তে চায় দলটি। যদিও এ টার্গেট আরো বড় ছিল।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও তা উঠে এসেছে। কিন্তু চরম প্রতিকূল পরিবেশেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি জোট নির্বাচনে টিকে থাকায় বড় সাফল্যের আশা কাটছাঁট করে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে এখন কাজ করছে দলটি। টার্গেট পূরণ করতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগ প্রভাবিত আসন ঘিরে শক্ত ও জোরালো পরিকল্পনা সাজিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ জন্য তরুণ-নারী এবং হতদরিদ্র ও ভাসমান ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সরকারের তরফ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর হাসপাতাল মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণ করব। যার সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে আমরা করেছি। এ ছাড়া বস্তিবাসী যারা আছেন তারা থাকবে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে। ঢাকা শহর ঘিরে আমরা একটা রিং রোড তৈরি করব, যা হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। এতে দ্রুতগামী সব যানবাহন চলতে পারবে। মহানগর ঘিরে পাঁচটি নদীর নাব্যতা ফেরাতে এগুলো খনন করা হবে এবং নদীগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে। এ সময় তিনি উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে ভোট দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয়-আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আওয়ামী লীগের মনোভাব ছিল একটি অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের। ওই নির্বাচনে অন্তত এক শ’ থেকে দেড় শ’ রাজনৈতিক দলের সম্মিলন ঘটবে। এত বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ না নিলেও তেমন প্রভাব পড়ত না বলে মনে করেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ রকম মন্তব্যও আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায় থেকে বহুবার বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি বোঝাতে সে ক্ষেত্রে সহজ হতো।
কিন্তু বিকল্প ধারাকে বাদ রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আওয়ামী লীগের সাবেক হেভিওয়েট নেতাদের যোগদান এবং মূল নেতৃত্বে বিএনপি থাকায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে আওয়ামী লীগ। শেষমেশ কোনো অঘটন ছাড়াই প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং একের পর এক সহিংসতার শিকার, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার উপেক্ষা করে নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীনেরা।
এ জন্য টার্গেটকৃত আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে কোনোভাবেই মাঠে দাঁড়াতে দেবেন না ক্ষমতাসীনেরা। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের আসনগুলো। খুলনার ১০টি জেলায় আছে ৩৬টি, বরিশালের ছয়টি জেলায় আছে ২১টি, ময়মনসিংহের চার জেলায় আছে ২৪টি এবং ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় আছে ৭০টি আসন। এ চারটি বিভাগের ১৫১ আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা ও নরসিংদীর কিছু আসন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই আসনগুলো রংপুর বিভাগের জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা চলছে। আর বাকি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের আসনগুলো নিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই বিভাগগুলোর বেশির ভাগ আসন বিএনপি পাবে বলে ধরে নিয়ে ভোটের মাঠের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে আওয়ামী লীগে। তবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হেভিওয়েট নেতাদের আসনগুলো বের করে আনতে জোরালোভাবে কাজ করছে দলটি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারবে তা ছিল তাদের চিন্তার বাইরে। বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে ২০০ আসনের মূল টার্গেট পূরণ করে বাকি ১০০ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের আয়োজন করার চিন্তাভাবনা ছিল। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও খুশি থাকত।