আলোচনার মাধ্যমে আফগান সমস্যার সমাধানের জন্য পাকিস্তান যখন চীন, রাশিয়া ও ইরানের সাথে পরামর্শ করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রও মনে করছে আফগান সঙ্ঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এই তিনটি দেশ ।
এই সপ্তাহে কংগ্রেসে পাঠানো মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানে চীনের সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তৎপরতার পেছনে রয়েছে দেশটির এই নিরাপত্তা উদ্বেগ যে, সন্ত্রাসবাদ আফগানিস্তানের সীমান্ত পার হয়ে চীনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়বে। তাছাড়া রয়েছে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সুরক্ষায় চীনের ক্রমবর্ধমান আকাক্সক্ষাও ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে- ‘ইরান একটি স্থিতিশীল আফগান সরকার চাইছে, যে সরকার আইএসকে নির্মূল করা, মার্কিন/ ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতির অবসান ঘটানো, পানি অধিকার, সীমান্ত নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইরানের স্বার্থ রক্ষায় সহানুভূতিশীল।’ পেন্টাগন মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছে, ‘রাশিয়া আফগানিস্তানে তালেবানসহ অনেক খেলোয়াড়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে মধ্য এশিয়ায় তার স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে ।’
মার্কিন রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমঝোতা প্রচেষ্টা ও বিদ্রোহীদের অভয়ারণ্যগুলোকে নির্মূল করায় সহযোগিতার জন্য পাকিস্তানের ওপর চীনের চাপ চাইছে আফগানিস্তান।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সীমান্তবর্তী ওয়াখান করিডোরে একটি পার্বত্য ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ দেবে আফগানিস্তান। চীন উদ্বিগ্ন যে ওয়াখান করিডোরের মধ্য দিয়ে উইঘুর বিদ্রোহীরা স্থানান্তরিত হতে পারে, যা এই অঞ্চলে চীনের স্বার্থের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে এই অঞ্চলে উগ্রবাদের বিস্তারে চীনের উদ্বেগ একটি ইতিবাচক উপাদান, যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ দমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করার জন্য বেইজিংকে উৎসাহিত করতে পারে।
পেন্টাগন আফগানিস্তানে ইরানের প্রভাবকে স্বীকার করে এবং দাবি করে যে তেহরান আফগানিস্তানের সরকারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কাবুলকে ক্ষুব্ধ করার চেষ্টা না করেই তালেবানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রদানে ‘বহুমুখী কৌশল’ অনুসরণ করছে।
পশ্চিম, মধ্য ও উত্তর আফগানিস্তানে ইরানের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে স্থানীয় আফগানরা ইরানের সাথে অভিন্ন ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষা লালন করে।
রাশিয়ার আফগান নীতির পর্যালোচনায় পেন্টাগন উল্লেখ করেছে যে, মস্কো কাবুলের সাথে অস্ত্র বিক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণদানকে নবায়ন করতে চায়, যা আফগান সরকারকে প্রভাবিত করবে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছেÑ ‘উত্তর আফগানিস্তানে একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া দীর্ঘকাল ধরে আফগান সরকারকে সমর্থন করছে। উত্তর আফগানিস্তানে আইএসের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় তাজিকিস্তানে ২০তম সামরিক ঘাঁটিকে আরো জোরদার করেছে রাশিয়া।’