টাকায় নয়, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টেলিটকের ইন্টারনেট

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ১শ টাকায় নয়, তারা বিনামূল্যে টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

আর রাষ্ট্রায়ত্ত এই অপারেটরের নেটওয়ার্ক নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং টেলিটক কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা দেবেন।

১শ টাকায় সারামাসে টেলিটকের ইন্টারনেটে শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হবে বলে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জুম অ্যাপলিকশনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বলেন, নামমাত্র মূল্যে নয়, একেবারেই বিনামূল্যে। তাদের মাসে ১শ টাকা রিচার্জ করতে হবে। এই টাকা তাদের নিবন্ধন, চিহ্নিতকরণ, ভয়েস কল, এসএমএস এবং অন্য সময় ইন্টারনেটে খরচ করতে পারবেন। তবে তারা যে শিক্ষার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন তার জন্য এক পয়সাও খরচ করতে হবে না। ইউজিসি তাদের প্রকল্প বিডিরেনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে সব মোবাইল অপারেটরকে চিঠি দিয়েছিল।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিডিরেন থেকে যে কনটেন্ট, যে ক্লাস হবে সেই ডাটা শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি। এজন্য এক পয়সাও খরচ গুনতে হবে না।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ১শ টাকায় নয়, মোবাইলে ব্যালান্স থাকলেই ক্লাস চলাকালীন প্রবেশ করলে সেই ইন্টারনেট দিয়ে ক্লাস করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিয়ে তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফোরজি রয়েছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের অনেকেই জেলা বা উপজেলা শহরে থাকে বিধায় তা কাভার হবে। এর বাইরে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে কীভাবে ভালো সেবা দেওয়া যায়।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিডিরেন সাত লাখ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ক্লাসের আওতায় নিতে টার্গেট ধরেছে বলেও জানান টেলিটকের এমডি।

নতুন সিম ও পুরাতন সিমের গ্রাহক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এই সুবিধা পাবেন জানিয়ে টেলিটকের এমডি শিক্ষার্থী নিশ্চিতকরণ সম্পর্কে বলেন, আমাদেরকে ক্লাস শিক্ষকের তালিকা দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী ওই সময়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের যুক্ত করবেন।

তিনি বলেন, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি। আমরা এক-দুইদিনের মধ্যে সেবাদান শুরু করব।

আর অন্য অপারেটরের এগিয়ে না আসা প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তারা তো নিজেদের ব্যবসা দেখে আগে। টেলিটক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা মনে করেছি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। লোকসান মনে করব না। এটা নতুন প্রজন্মের জন্য বিনিয়োগ করছি। টেলিটককে নির্দেশ দিয়েছি যেকোনো মূল্যে তাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলে লাভ কী?

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০১৮ সালে টেলিটককে ভঙ্গুর অবস্থায় পেয়েছি। দুই আড়াই বছরে দ্বিগুণ এক্সপানশন করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ সাল নাগাদ পুরো বাংলাদেশে ফোরজি থেকে সব নেটওয়ার্ক পাবে। হাওর, প্রত্যন্ত এলাকা, পাহাড়ি এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছি। পুরো বাংলাদেশ নেটওয়ার্কে আনলে পুরো দেশের ছেলেরা অনলাইন ক্লাসের জন্য টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারতো।

সারাদেশে টেলিটকের নেটওয়ার্কের অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের জন্য সেবাদান নিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অন্যভাবে কাভার জন্য।

অন্যান্য সব অপারেটরকে আহ্বান জানালেও তারা সাড়া দেয়নি। তবে টেলিটক সাড়া দিলেও অপারেটরটির নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানান, টেলিটকের নেটওয়ার্কের সমস্যা কথা অনেকেই জানিয়েছে। আশা করি, অচিরেই নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

অন্যদিকে, দেশের সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীর জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্কুল-কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার এই উদ্যোগ যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী। শিক্ষাবান্ধব সরকারের এটি মহতি উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগ আরও জনবান্ধব হবে যদি প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরও একই মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া হয়। সব শিক্ষার্থীকেই এই সুবিধাটি দেওয়া হোক। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ সিম প্রবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় অনলাইন ক্লাসে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে অংশ নিতে পারছে না। ফলে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষায় বৈষম্য শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার জোর দাবি জানান জিয়াউল কবির।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা বেড়েছে বলে মনে করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ।

তিনি বলেন, অনলাইনে পাঠদান এখন একটি বাস্তবতা। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ও ডিভাইস সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অনলাইনে গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে মনোযোগ দিতে হবে। করোনার টিকা আবিষ্কার হলে শিক্ষায় সরাসরি ও নিয়মিত পাঠদানে ফিরে গেলেও অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব কোন অংশে কমবে না। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সরাসরি পাঠদানের পাশাপাশি অনলাইনে কোর্স চালু রাখার পরামর্শ দেন।

Share this post

scroll to top