ময়মনসিংহ বিভাগে গত মাসে ১৬টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে। এই মাসেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৭৯ জন এবং আহত ৩৬৮ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৬ জন, শিশু ৩২। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪০ দশমিক ০৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৮১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৭ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
একই সময়ে ১৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ৩২ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৬টি পৃথক রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৩টি (৩৭.৪১%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯৮টি (৩২.৪৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৭.৫৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (১২.৫৮%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এই বিভাগে ১৬টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম মুন্সিগঞ্জে, একটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বিজ্ঞপ্তিতে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহের মধ্যে বলা হয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন সেগুলো হলো- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। জুলাই মাসে ২৯৩টি দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হিসাবে আগস্ট মাসে দুর্ঘটনা ৩.০৭% এবং প্রাণহানি ৬.৪৬% বেড়েছে।