বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা করতে সরকারের পরিকল্পনা অনেক দিন আগের। সেজন্য সরকারের ছকেই বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। এই আটকিয়ে রাখা সরকারের অবৈধ ক্ষমতার জোরে। এখন তার সাথে দেখাও করতে দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রিজভী আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৮ নভেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭৭৩টি গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় মোট ৮২৪৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট হামলার সংখ্যা ২৬৯৩, মোট আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৪ জন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া নির্দোষ এবং কথিত মামলাগুলোর সাথে তার বিন্দুবিসর্গ সংশ্লিষ্টতাও নেই। সরকারপ্রধান যে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তাকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে, এখন প্রতিমুহূর্তে তার উপর জুলুমের নিদর্শন দেখলেই সেটি স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রতিটি কারাবন্দীর সাত দিন পর পর নিকটজনদের সাক্ষাতের বিধানের নিয়ম ভেঙে সরকার বেগম জিয়াকে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে পনের দিন পর পর। এটিও বেগম জিয়াকে মানসিকভাবে নির্যাতনের একটি পন্থা। তবে গত ২১ ডিসেম্বর সাক্ষাতের ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও নিকটাত্মীয়দের তার সাথে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। জনগণের বিপুল সমাদৃত জনপ্রিয় এই নেত্রীকে জুলুম করে পর্যুদস্ত করাটাই যেন সরকারের মূল এজেন্ডা। এই জুলুমের হিসাব একদিন জনগণের কাছে দিতেই হবে সরকারকে।
তিনি বলেন, আবারো নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বানানো গল্প ফাঁদতে ব্যবহার করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অবশ্যই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী চক্রান্ত জালের এটি একটি অংশ। তবে কলঙ্ক লেপনের জন্য অবিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা অপপ্রচার জনগণের সাথে মশকরা করারই সামিল।
কুমিল্লা-৩ আসনে অরাজকতা
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও জাহাপুর ইউনিয়নের ছয় বারের সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদের বাড়িতে পুলিশসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হানা দিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুরাদনগর থানার পুলিশের এএসআই কবির ও এএসআই রোকনের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা এঘটনা ঘটায়। এ সময় তার বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় পরিবারের সদস্য নারী ও শিশুদের সাথে খারাপ আচরণ ও গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পুলিশের এই তান্ডবে শিশুরা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করে ও তার বয়োঃবৃদ্ধ স্ত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের প্রমাণ মুছে ফেলতে বাড়ির নিরাপত্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলো খুলে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পুলিশ এ ঘটনা ঘটিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় কিছু রিকশাচালকের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, তৌফিক মীর বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের মামা। তিনি মুরাদনগর এলাকার জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনার জন্য মুরাদনগর থানার ওসিসহ দুই এএসআইয়ের পদত্যাগের জোর দাবি জানান রিজভী।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত দুদিন আগে যশোরে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম ্অমিতকে শাসাচ্ছেন সন্ত্রাসীদের রড কোমরে গুঁজে পুলিশ কর্মকর্তা। যা বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মাজহার আলী শিবা সানুকে গতকাল কাকরাইল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নামে কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
রিজভী বলেন, নোয়াখালী-১, পঞ্চগড়, ঢাকা-৫, টাঙ্গাইল-৫, টাঙ্গাইল-২, জামালপুর-৩, ফেনী-২, ফেনী-৩, মৌলভীবাজার-৪, চট্টগ্রাম-৮, পাবনা-২, ঢাকা জেলা, ঢাকা-৪, মানিকগঞ্জ-২, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর-২, পিরোজপুর-১, ভোলা জেলা, খুলনা-৬, শেরপুর-১, সিলেট-৩, সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, নোয়াখালী-২ ও রাঙামাটি জেলায় নির্বাচনী প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিএনপি ও অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।