ঘরের মধ্যে থাকবার পাই না। বৃষ্টি এলে টিনের চালা চুইয়ে পানি পড়ে। পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল দিয়েও লাভ হয় না, ঘরের ভেতর হাঁটুপানি জমে। ঘরে গিয়ে দেখেন, চালার টিন যেন ধান চালনীর ছিদ্রর মত। সরেজমিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে ওই প্রকল্পের বাসিন্দা হরবলা বেগম এ কথা গুলো বলেন।
উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে খাসজমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ ২০ বছর সময় ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এ অবস্থায় এ প্রকল্পের বাসিন্দারা সরকারের কাছে ঘর মেরামত, মাটি ভরাটের দাবি জানাচ্ছেন।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের কান্দুলী গ্রামে ৮ দশমিক ০৮ একর খাস জমির ওপর সেনাবাহিনীর তৎকালীন ৩৭ এসটি ব্যাটালিয়ন ইউনিট ‘কুঞ্জবিলাস কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প’টি নির্মাণ করে। প্রকল্পে মসজিদ, কবরস্থান, পুকুর, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ছয়টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে দশটি করে ছোট কক্ষ রয়েছে। ওই সময় ৭ শতাংশ কৃষি ও ২ দশমিক ৫০ শতাংশ আবাসিক জমিসহ একটি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ব্যারাকের একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে দশটি পরিবারের জন্য যৌথভাবে চারটি শৌচাগার ও দুটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য একটি করে নলক‚প ও একটি কমিউনিটি সেন্টারও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে সংস্কার না করায় এসবের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সব কয়টি ব্যারাক জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে পড়েছে। সেগুলো বন্ধ করতে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর ইট ও খড়ির চাপা দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালার কপাট ভেঙে গেছে। এসব জানালা-দরজা চটের বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। দুই-একজন নিজেদের টাকা ব্যয় করে কোন রকমে থাকার জন্য টিনে দুচালা ঘরও দিয়েছেন।
এসময় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সরকার ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও সংস্কার না করায় প্রকল্পের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরের ভেতর পানি পড়ে। শীতের সময় ঠান্ডা লাগে। এতে তারা নানা সমস্যার মধ্যে থাকলেও সরকারিভাবে তা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি হারুন মিয়া বলেন, প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মওসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি সরকারের কাছে দ্রæত সময়ের মধ্যে ঘর মেরামত ও মাটি ভরাটের দাবি জানিয়েছেন।
ধানশাইলের ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সহায়-সম্বলহীন ভূমিহীন ৬০টি পরিবারের সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সরকার। কিন্তু নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এগুলোর সংস্কার কাজ না করায় এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে জুনের শেষে সাড়ে চার লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এ বরাদ্দ থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পে পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও দুই লাখ টাকা আছে, বন্যার পানির জন্য ঘরের সংস্কার কাজ শুরু করা হয়নি। তবে দ্রæত সংস্কার শুরু করা হবে এবং মাটি বরাটের জন্য আবারও বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।