২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন বাদ দিলে দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যবেক্ষক এবারের নির্বাচনে সক্রিয় থাকবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ফলে প্রায় অর্ধেক ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে যাবে।
অন্য দিকে আসন্ন নির্বাচনে সাংবাদিকদের ওপরেও নজিরবিহীন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বরের আগে-পরে চার দিন মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। আর সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলও এর আওতায় বাইরে নয়। তাই দ্রুত কোনো ভোটকেন্দ্রে গিয়ে খবর সংগ্রহের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া ভোটকক্ষ তো নয়ই, ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ রয়েছে।
এসব কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম, জালভোট, কেন্দ্র দখল করে কোনো প্রার্থীর পক্ষে জোর করে ভোট দেয়া বা প্রতিপক্ষের সাথে সঙ্ঘাতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ বা সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই লাখ ১৮ হাজার স্থানীয় ও ২২৫ বিদেশী পর্যবেক্ষক ছিলেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এক লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ স্থানীয় ও ৫৯৩ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য গত রোববার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ১৭৫ জন বিদেশীকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসহ (এনফ্রেল) বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অনুমতি দেয়া এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ১১৮টি সংস্থার ২৫ হাজার ৯২০ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষককে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়েছে।
২০০১ সালে ২৯ হাজার ৯৭৮ ভোটকেন্দ্রের মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি ভোটারের ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন ৪০ হাজার ১৮৩ ভোটকেন্দ্রের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বড় জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) ২০০৮ সালে ৭০ হাজার নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। এবার ১৫ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে গ্রুপটি। এই জনবল দিয়ে ইডব্লিউজি এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। ইডব্লিউজির বাইরে আরো ১০ হাজার স্থানীয় পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে অর্ধেকের মতো কেন্দ্রে স্থানীয় পর্যবেক্ষকেরা যেতে পারবেন। এবার আবেদন করেও প্রায় ৯ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পাননি।
এনফ্রেল থেকে ৩২ জন পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে আসার কথা ছিল, যা একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশকারী বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মধ্যে পরিচয়পত্র ও ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাটি। এ ব্যাপারে দেয়া এক বিবৃতিতে এনফ্রেল বলেছে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জনগণের আস্থার জন্য পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। তথ্য সংগ্রহ ও চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখতে পর্যবেক্ষকদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করতে বাধা দেয়া স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল আট হাজার ৮৭৮ জন স্থানীয় ও মাত্র চারজন বিদেশী পর্যবেক্ষক। ভারত ও ভুটান থেকে এই চারজন বিদেশী পর্যবেক্ষক এসেছিলেন। সারা বিশ্বে একতরফা নির্বাচনটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও ভারত ও ভুটানের পর্যবেক্ষকেরা ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন।