ময়মনসিংহে ধরা পড়েছে ১৫ ইঞ্চি লম্বা এক কেজি টাকি মাছ!

Taki-Fish-Mymensinghআপনি কত বড় টাকি মাছ দেখেছেন? টাকি মাছ কত বড় হয় জানেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় সবাই বলেছেন বড়জোর ৮/৯ ইঞ্চি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! ময়মনসিংহে প্রায় ১৫ ইঞ্চি লম্বা এবং ৯৫৪ গ্রাম ওজনের একটি টাকি মাছ ধরা পড়েছে। গত শনিবার ময়মনসিংহ মহানগরীর দীঘারকান্দা সংলগ্ন চরারবিলে এই টাকি মাছটি ধরা পড়ে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তাকর্মী দীঘারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আহসান আলী চরারবিলে মাছ ধরার সময় এ টাকি মাছটি ধরেন এবং ওইদিনই তিনি মাছটি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হস্তান্তর করেন। গবেষকরা বলছেন, এত বড় টাকি মাছসত্যিই ‘বিরল’ এবং সচরাচর ধরা পড়ার কথা শোনাও যায়নি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর জানান, এত বড় টাকি মাছ তিনি প্রথম দেখেছেন। এক কেজি ওজনের টাকি ধরা পড়ার খবর সত্যিই বিরল। গবেষণার জন্য তিনি মাছটি সংগ্রহ এবং ইনস্টিটিউটের গবেষনা পুকুরে মজুত করেছেন। তিনি জানান, এটি মূলত; মিঠা পানির মাছ। টাকি মাছের প্রজাতির নাম ‘চান্না পাঙ্কটাটা’। এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল হলো জলাবদ্ধ কৃষিজমি, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় এবং ব্র্যাকিশ পানি (স্বাদুপানি ও লবনযুক্ত পানির মিশ্রণ)। টাকিমাছের জীবনকাল ৫/৬ বছর। এটি সাধারণত দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫.০ সেন্টিমিটার (৫.৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হয়। তবে ৩১.০ সেন্টিমিটার (১২.২ ইঞ্চি) পর্যন্ত পুরুষ টাকি পাওয়া যায়। এটি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং তিব্বত জুড়ে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির প্রিয় খাদ্য হলো অন্যান্য ছোট মাছের কুসুম, মাছি এবং মাছের লার্ভা। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজননকালে চান্না পাঙ্কটাটা (দাগযুক্ত স্নেকহেড) একটি বাসা তৈরি করে ৩০ হাজার পর্যন্ত ডিম দেয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক রিপন জানান, প্রায় ১৫ ইঞ্চি লম্বা প্রায় এক কেজি ওজনের টাকি মাছ খুবই দুর্লভ। এত বড় টাকি তিনিও দেখেননি। টাকি মাছ প্রাকৃতিক নিরিবিলি পরিবেশে বসবাস করে। খরার কারণে পানি শুকিয়ে যাওয়া, ক্ষেতে ও জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ, ব্যাপকহারে মাছ ধরার পাশিপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের কারণে টাকি মাছের জীবন হুমকির মুখে এবং বিপন্নের পথে। প্রজননকালে মানুষ টাকি মাছের পোনা বা বাইশ ধরে খেয়ে ফেলায় দিনদিনই টাকির বংশ বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, এই মাছ ‘প্যারেন্টাইল কেয়ার’ স্বভাবের অর্থাৎ এরা পিতৃ-মাতৃ স্নেহে বেড়ে উঠে। আমাদের দেশে পরিবেশ পেলে বড় বড় সাইজের টাকি মাছ সহজলভ্য হতো। ভোজন রসিকদের কাছে টাকি মাছের ভর্তা লোভনীয়, খুবই সুস্বাদ ও মজাদার খাবার। আমাদের দেশে টাকি মাছের ভর্তা খাননি এমন মানুষ নেই বললেই চলে

Share this post

scroll to top