প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা চলমান রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, এসব পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকে যেহেতু ক্লাস ফাইভে এবং এইটে একটা পরীক্ষা হচ্ছে-জানি অনেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলেন। অনেকের আপত্তি আছে কেন এই পরীক্ষাটা হচ্ছে। কিন্তু এই পরীক্ষাটা হওয়ার ফলে আমাদের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা পরীক্ষার পরে হাতে যে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে, আমি মনে করি তা তাদের সামনের দিকে পড়াশোনায় আরো মনযোগী করবে।’
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সবাই তো আর উচ্চশিক্ষা নেবে না, অনেকেই কারিগরি শিক্ষা বা অন্য যেসব তাদের দক্ষতা রয়েছে সেসব পেশায় তারা যাবে। এ অবস্থায় একটি সার্টিফিকেট থাকলে তাদের সুবিধা হয়।
অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও এর সমমানের এবতেদায়ী পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান আজ সোমাবর সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ ফলাফল হস্তান্তর করেন।
একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়তে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী একান্ত প্রয়োজন। তাই, আমরা শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। যে শিক্ষাটা হতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন।
আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ কমে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেই আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় এবং ছয়টি নির্মাণও করে দেয়।
তিনি এ সময় কম্পিউটারের ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসায় আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, যার সুফলটা আমরা এখন পাচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আজকে সেই বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। আজকে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টি মিডিয়া ক্লাস রুম প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হবে কারণ একটি শিক্ষিত জাতিই পারবে আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা গ্রাজুয়েশন পেয়ে গেছি। সেটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা জাতিসঙ্ঘ ২০৩০ সালের মধ্যে যে স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে এর যেসব ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো ইতোমধ্যে আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমডিজি’র মত আমরা এসডিজি সফলভাবে বাস্তবয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই সাথে আমাদের একটা লক্ষ্য রয়েছে যে, বাংলাদেশ যেন আরো উন্নত সমৃদ্ধ হয়। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে যেমন সুনির্দিষ্ট করেছি তেমনি নদী মাতৃক বাংলাদেশে আরো সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের অংশ হিসেবে ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।
‘অর্থাৎ একশ বছর পরেও বাংলাদেশ কেমন হবে সে পরিকল্পনাও আমরা জাতিকে দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলেই তবে আমরা আমাদের অর্জনগুলো আরো দ্রত উন্নতিতে করতে পারবো’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকে পরীক্ষার ফলাফল উন্নতিতে আমরা অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। ফলাফল যেন সঠিক সময়ে হয় সেটাও আমরা দেখছি। বিনা পয়সায় বই বিতরণের সুবাদে শিক্ষার প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ট্রাষ্ট ফান্ড গঠন করে বৃত্তি দিচ্ছি। যেন দরিদ্র মেধাবীরা কোনোভাবে বঞ্চিত না হয় এবং তারাও শিক্ষাটা নিতে পারে। এজন্য শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি এ সময় কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাষ্টার্স সমমান প্রদানের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করাতে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, যারা শিক্ষা গ্রহণ করছে এর মাধ্যমে তাদের জন্য জীবন-জীবিকা এবং সেইসাথে আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাটা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য। এতে তারা জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে যে একটি সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম সেই কাজটাই আমরা করতে পেরেছি।
পরীক্ষার ফলাফলে প্রায় ৮৫ শতাংশ কৃতকার্য হওয়াকে ভালো উল্লেখ করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় আরো উৎসাহ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী আহবান জানান।
যারা পরীক্ষার ফলাফলে কৃতকার্য হয়েছে তাদের এবং শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সবাইকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর যারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের আরো মনযোগ দিয়ে পড়াশোনার পরামর্শ দেন তিনি।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চলতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
পিইসি ও এবতেদায়ী পরীক্ষা ১৮ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০,৯৫,১২৩ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেএসসি ও জেডিসি’র মোট ২৫,৯৯,১৬৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২২,৩০,৮২৯ শিক্ষার্থী এবং এর পাসের হার হচ্ছে ৮৫.৮৩। এরমধ্যে ৬৮,০৯৫ শিক্ষার্থী জিপিএ পেয়েছে।