সরকারের দেয়া সব শর্ত এবং করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনেই পাঠদান কার্যক্রমে ফিরতে চায় দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন। কিন্ডারগার্টেন মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন জানানোর প্রস্তুতিও চলছে। তবে সর্বাগ্রে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতির বিষয়েও সরকারের দেয়া নির্দেশনা মানতে চায় তারা। শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে এবং লিখিত আকারে সরকারের কাছে আবেদন জানাবে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদ।
এ দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নিজ নিজ উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে দাবি জানিয়েছেন ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার বেশ কিছু কিন্ডারগার্টের মালিক।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের সভাপতি এম ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, দেশের সব কিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অফিস আদালত, হাট-বাজার, কল-কারখানা, ব্যংক-বীমা, মার্কেট, দোকান, বিভিন্ন বিনোদন স্থান, পর্যটনকেন্দ্র গণপরিবহন থেকে শুরু করে সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে বা স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ ছাড়াও মাদরাসার হিফজখানাও খুলে দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারীর কারণে সরকারি ঘোষণায় গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে যদি দ্রুততম সময়ে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়, তা হলে শিক্ষকদের আন্তরিকতায় লেখাপড়া কিছুটা হলেও রিকভারি করা সম্ভব হবে।
কিন্ডারগার্টেনের কয়েকজন শিক্ষক জানান, কয়েক দিন ধরেই একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা এখন আর ঘরে নেই। ছোটদেরকে নিয়ে অভিভাবকরা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে, পর্যটনে, হাটে বাজারে, মার্কেটে, রাস্তাঘাটে যাচ্ছেন, গণপরিবহনে চলাচল করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যে সময়ে ক্লাসে থাকত, সে সময়ে তারা বিভিন্ন স্থানে বিনোদন কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘুরাফেরা করছে। সরকার যদি দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়, তা হলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শিক্ষা থেকে ঝরে যেতে পারে। আবার অনেক শিক্ষার্থী বিপথগামী হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে।
শিক্ষকদের দাবি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া খুবই জরুরি। এ ছাড়া সরকারি কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়া সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত, যা সম্পূর্ণরূপে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভরশীল। যদিও ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতে না পারায় মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অনেকেই বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিলসহ কোনো প্রকারের বিল পরিশোধ করতে পারিনি। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে, জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক শিক্ষক অসম্মানজনক পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন।
অন্য দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা পাওনা পরিশোধের চাপে অনেকেই অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এ অবস্থা আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদের পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ব্যাংক লোন এবং শিক্ষক হিসেবে সম্মান রক্ষার্থে আর্থিক সহায়তা চাইলেও তাতে সরকার কোনোভাবেই কর্ণপাত করেননি।
এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টার ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার শর্তে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে এক দিকে যেমন শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠে মনোযোগী হতে পারে, তেমনি কিন্ডারগার্টেন মালিকরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
তাই সরকারের কাছে দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১০ লাখ অবহেলিত শিক্ষক এবং এক কোটি শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তারোপ করে দ্রুততম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার আবেদন জানিয়েছে কিন্ডারগার্টের মালিকদের সংগঠন কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্যপরিষদ।