ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে শুক্রবার মাঠে নামবে পাকিস্তান। এ ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে ১০ বছরের আক্ষেপ ঘোচাতে চায় সফরকারীরা। দুই টেস্ট শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ম্যানচেস্টারে সিরিজের প্রথম টেস্ট ৩ উইকেটে জিতেছিলো ইংলিশরা। বৃষ্টির কারণে সাউদাম্পটনের ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্র’তে শেষ হয়। তাই আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য জয় বা ড্র। জিতলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতবে জো রুটের দল। আর ড্র করলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতবে তারা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচটি ড্র হলে টানা তৃতীয়বারের মতো সিরিজ ড্রতে শেষ করার নজির গড়বে পাকিস্তান। অবশ্য ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে টানা তিনটি সিরিজ জয়ের রেকর্ডও রয়েছে পাকিস্তানের।
সাউদাম্পটনে আগামীকাল ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের তৃতীয় ও শেষ টেস্টটি শুরু হবে বিকেল ৪টায়।
করোনার মাঝেই দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আয়োজন করে ইংল্যান্ড। তার আগে গেল ৮ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু করে ১১৬ দিন পর ক্রিকেটকে মাঠে ফেরায় ইংল্যান্ডে এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথমটা জয় দিয়ে শুরু করে ইংল্যান্ড। ফলে আগের পাঁচটি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হারের স্বাদ নেয়ার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় ইংলিশরা।
প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন ইংল্যান্ডকে ২৭৭ রানের টার্গেট দিয়েছিলো পাকিস্তান। এমন পুঁজিকে সাথে নিয়ে দলকে জয়ের স্বাদ দিতে দারুন লড়াই করে পাকিস্তানের বোলাররা। ১১৭ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের উপরের সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠায় তারা। এতে নিশ্চিতভাবে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পাকিস্তান।
কিন্তু পাকিস্তানের স্বপ্নে পানি ঢেলে দেন ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক জশ বাটলার ও বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। ষষ্ঠ উইকেটে ১৩৯ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে দুর্দান্ত এক জয় এনে দেন বাটলার ও ওকস।
বাটলার ৭৫ রানে থামলেও, দলের জয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন ওকস। ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ফলে দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে সিরিজে শুরু করে ইংল্যান্ড।
প্রথম টেস্টের মতো পারফরমেন্স, দ্বিতীয় ম্যাচে প্রদর্শন করার সুযোগ পায়নি ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা। কারণ বৃষ্টির কারণে পাঁচদিনে মাত্র ১৩৪ দশমিক ৩ ওভার খেলা হয়। ফলে ম্যাচটি ড্র’তেই শেষ হয়।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে বৃষ্টি কোনো ঝামেলা করবে না বলে আশাবাদী ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান দল। সিরিজ জয়ের স্বাদ নিতে মাঠ খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের প্রত্যাশায় ইংল্যান্ড কোচ ক্রিস সিলভারউড। তিনি বলেন, ‘আমরা সিরিজ জিততে চাই। সেটি হলে, দারুন এক ব্যাপার হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ জয়, অর্জনের খাতায় যোগ হবে আরও একটি অধ্যায়। তবে শেষ টেস্টে দলকে আরও ভালো খেলতে হবে। আমরা টেস্টটি জিততে চাই, কারণ প্রত্যকটি ম্যাচের সাথে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জড়িত। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা ম্যাচ জয়ের পরিকল্পনা করেছি।’
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড। ১৪ ম্যাচে ২৭৯ পয়েন্ট সংগ্রহে রয়েছে ইংলিশদের। এই টেস্টটি জিততে বা টাই করতে পারলে পয়েন্ট টেবিলে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠবে ইংল্যান্ড। তবে ড্র করলে অসিদের টপকে যেতে পারবে না ইংলিশরা।
তাই পয়েন্ট টেবিলেও চোখ সিলভাউডের, ‘আমরা ম্যাচ নিয়েই বেশি ভাবছি। ম্যাচ জয়টি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ৪০ পয়েন্ট আমাদের অ্যাকাউন্টে যোগ হবে। যেহেতু এ ম্যাচের সাথে চ্যাম্পিয়নশিপ জড়িত তাই জয়ের জন্য যা দরকার আমরা তাই করবো।’
৯ ম্যাচে ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ভারত। ১০ ম্যাচে ২৯৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে অস্ট্রেলিয়া। অসিদের সাথে ইংল্যান্ডের পয়েন্টের ব্যবধান ১৭। ৭ ম্যাচে ১৫৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে পাকিস্তান। এ ম্যাচ জিতলে নিউজিল্যান্ডকে টপকে চতুর্থ স্থানে উঠার সুযোগ থাকছে পাকিস্তানের।
কিন্তু পয়েন্ট টেবিল নিয়ে ভাবছে না পাকিস্তান। দেশকে ঐতিহাসিক সময়ে জয় উপহার দিতে চায় তারা। গতকাল এমনটাই বলেছিলেন পাকিস্তানের কোচ মিসবাহ উল হক, ‘টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন স্বাধীনতা দিবস পালন করা বিশেষ কিছু। বৈরি আবহাওয়ার কারনে আগের টেস্টে পাকিস্তান সাফল্য পেতে পারেনি। তবে দেশের ঐতিহাসিক সময়ে ভালো কিছু উপহার দেয়া যেত। তবে আমরা আশা করছি, শেষ টেস্টে আমরা দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। কোচ হিসেবে আমি বলতে পারি এটি স্বাধীনতার মাস। তাই দেরিতে হলেও দেশকে জয় উপহার দেয়া আমাদের কর্তব্য।’
অতীতে স্বাধীনতা দিবসের মাসে বেশ কয়েকটি সাফল্যও পেয়েছিলো পাকিস্তান। সেগুলো মনে করিয়ে দেন মিসবাহ, ‘ইংল্যান্ডে আগে সফরগুলোতে পাকিস্তানের দুর্দান্ত কিছু স্মৃতি রয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের পর ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয় করে পাকিস্তান। ১৯৮২ সালে লর্ডসে দারুন জয় আছে আমাদের। তবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোন থেকে বলছি, ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট ওভাল টেস্ট জয়ে সিরিজে সমতা আনতে পেরেছিলাম, এটি গর্ব করার মতো।’
স্বাধীনতা দিবসের কারণে অতীতের স্মৃতি উজ্জীবিত করছে পাকিস্তানকে। গেল দু’সফরের স্মৃতিও পুরো দলকে অনুপ্রাণিত করছে বলে জানান মিসবাহ, ‘ইংল্যান্ডে আমাদের শেষ দু’টি সফর ছিলো ২০১৬ ও ২০১৮ সালে। ২০১৬ সালে চার ম্যাচের সিরিজে আমি দলের অধিনায়ক ছিলাম। ঐ সিরিজটি আমরা ড্র করি। ঐ সিরিজের স্মৃতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৮ সালে দুই ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান আবারো ড্রর স্বাদ পায়। এবার শেষ দু’টি সফরের স্মৃতি আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী সিরিজ সমতায় শেষ করতে পারবো।’
এখন পর্যন্ত ৮৫ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। ইংলিশদের জয় ২৬, পাকিস্তানের জয় ২১টি। ড্র হয়েছে ৩৮টি ম্যাচ।
ইংল্যান্ড দল : জো রুট (অধিনায়ক), ডম বেস, স্টুয়াার্ট ব্রড, ররি বার্নস, জস বাটলার, জ্যাক ক্রলি, স্যাম কারান, জেমস এন্ডারসন, জোফরা আর্চার, ওলি পোপ, ডম সিবলি, ক্রিস ওকস ও মার্ক উড।
পাকিস্তান দল : আজহার আলি (অধিনায়ক), বাবর আজম, আবিদ আলি, আসাদ শফিক, ফাহিম আশরাফ, ফাওয়াদ আলম, ইমাম-উল-হক, ইমরান খান, কাশিফ ভাট্টি, মোহাম্মদ আব্বাস, মোহাম্মদ রিজওয়ান, নাসিম শাহ, সরফরাজ আহমেদ, শাদাব খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ, সোহেল খান, উসমান শিনওয়ারি, ওয়াহাব রিয়াজ ও ইয়াসির শাহ।