করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা। মন্ত্রীর বক্তব্য দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
১৪ দলের নেতাদের মতে, যেখানে প্রতিদিন দেশে করোনায় ৩৫ থেকে ৪৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লাগামহীন বক্তব্য মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের দেশ থেকে করোনা বিদায় নেওয়ার পথে। আক্রান্ত বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুহার আমাদের দেশে অনেক কম। ভ্যাকসিন আসার আগেই করোনা চলে যাবে।
এর আগে ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, করোনার প্রকোপ কমে আসছে। আগস্টের শেষে অনেকগুলো হাসপাতাল নন-কোভিড করে দেওয়া হবে।
১৪ দলের নেতারা বলেন, করোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা বিশ্বের মানুষ ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশ ভ্যাসিন আবিষ্কারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই যাবে না। ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব না। যে মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন ভ্যাকসিন ছাড়াই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথে। একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে এ ধরনের বক্তব্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
১৪ দলের নেতারা বলছেন, বর্তমানে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে বলেই শনাক্ত কম হচ্ছে। এই মুহূর্তে আরও সতর্কতা অবলম্বন করে কমিউনিটি পরীক্ষা শুরু করা দরকার। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত ভ্যাকসিন না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতিকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে এক মত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার যদি মনে করে, করোনা সংক্রমণ কমে গেছে, সেটা ঠিক নয়। বরং শনাক্ত হচ্ছে না এটাই মূল কথা। এখন কমিউনিটি টেস্ট করা দরকার। তা না হলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হতে পারে। ”
জোটের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন। বিশ্বের কোথাও কেউ বলছে না ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা চলে যাবে। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে একটা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে এভাবে যা খুশি তাই বলতে পারেন না। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। ”
১৪ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, “পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব কথার মধ্য দিয়ে তার ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রথম থেকে সরকার বলে আসছিল করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি আছে, সব আছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কিছুই নাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেই সেটা প্রকাশ পায়। ”