৬০ বছরে পা দিল বাকৃবি

 

BAU Campus Pic

দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি এবং দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষে ময়মনসিংহে ব্রক্ষপুত্র নদেও কোল ঘেঁষে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের কৃষিশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। আজ (মঙ্গলবার) বাকৃবির ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা ৬০তম প্রতিষ্ঠা দিবস। একদিকে শোকাবহ আগস্ট মাস অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো জাঁকজমকপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকল ১০.৩০ মিনিটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাকৃবির বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারির সীমিত পরিসরে অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানমালার ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির, প্রোক্টর অধ্যাপক ড. মো আজহারুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড ফরিদা ইয়াসমিন বারী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক, সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো আবু হাদী নুর আলী খান, অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড মুহাম্মদ মহির উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশীদ, অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুর রহমান, অফিসার পরিষদ সভাপতি খাইরুল আলম নান্নুসহ কর্মচারি নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, শোকের মাস আগস্ট এবং করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে জাকজমকপূর্ণ কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। তবে সকালে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। ময়মনসিংহে ব্রক্ষপুত্র নদের কোলঘষে ১২০০ একরের সবুজ ছায়ায় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখানে কৃষি, ভেটেরিনারি, কৃষি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি, পশুপালন, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রমীণ সমাজবিজ্ঞান এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আওতায় ৪৩ টি বিভাগ ও ২ টি ইনষ্টিটিউশনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়া এই ক্যাম্পাসে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট, ইন্টার- ডিসিপ্লিনারি ইনষ্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি, ইনষ্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজ এবং হাওর ও চর উন্নয়ন ইনষ্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৭ হাজার ৯২৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৫৬৩জন। গবেষণায় প্রকৃতিকন্যাখ্যাত বাকৃবির রয়েছে বহু সাফল্য। ৫৯ বছরের পথ চলায় এসেছে অনেক অর্জন। বিগত কয়েক বছরে বাকৃবি ধানের বাস্ট প্রতিরোধী বাউ-ধান-৩ নামের জাত উদ্ভাবন, দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ও ইলিশ মাছের জীবন রহস্য উন্মোচন, পশু ও মানুষের ব্রæসেলোসিস রোগের জীবাণু শনাক্ত ও ডেঙ্গু ভাইরাসের সিরোটাইপ নির্ণয়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে।

এছাড়া মাটির গুণাগুণ ও উর্বরতা শক্তি নিয়ে পরীক্ষায় ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ উদ্ভাবন, ভেড়ার হিমায়িত ভ্রুণ থেকে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি, শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তি, ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে গবাদি পশু ও ব্রয়লার মুরগির খাদ্য হিসেবে প্ল্যানটেইন উদ্ভিদের ব্যবহার এবং ভাগনা মাছের জাত উদ্ভাবন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। কম খরচে ধান শুকানোর যন্ত্র বিএইউ-এসটি ডায়ার, পামওয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন উদ্ভাবনও করেছে বাকৃবির গবেষকরা। তাছাড়া, বাউকুল, ধান, সরিষা, সয়াবিন,আলু , মুখি কচুসহ বাইম, গুচি বাইম, বড় বাইম, কুঁচিয়া, গাঙ মাগুর, কই এবং বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিও উদ্ভাবন করা হয়। ১১ হাজারেরও বেশি বৃক্ষ প্রজাতি নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জার্মপ্লাজম সেন্টারটি বাকৃবি ক্যাম্পাসে অবস্থিত। নানান জাতের নানান প্রজাতি নিয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বৃহৎ এ সংগ্রহশালা।

এছাড়া রয়েছে প্রচীনতম কৃষি জাদুঘর এবং মৎস্য জাদুঘর। শোকের মাসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সবসময় সাদামাটা করে উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শোকের মাসে হওয়ায় আমরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারি না। তাই পরবর্তীতে যেনো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় সেজন্য প্রতিষ্ঠাদিবসের তারিখ পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করছি বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

Share this post

scroll to top