নদী অনেক দূর বয়ে যেতে চেয়েছিল…

নদী আক্তার। ছোট্ট এই মেয়েটির খুব ইচ্ছে ছিল চড়াই উৎরাই পার হয়ে নদীর মতোই বয়ে যাবে অনেক দূর! পড়াশুনা করে একদিন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিবে। ডাক্তার হবে। কিন্তু তা আর হলো না। তার ডাক্তার হওয়ার আকাঙ্খা অপূর্ণই থেকে গেল। বিদ্যুৎ নামের দানব তার সব ইচ্ছাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিয়েছে।

জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ইসলামী একাডেমী এন্ড হাই স্কুলের ছাত্রী এবং সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রফিক মিয়ার মেয়ে নদী আক্তার (১০) বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দু’পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে প্রায় দুই মাস আগে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় তার দেহের প্রায় অর্ধাংশ ঝলসে গেছে। তার ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়ে একদিন বাবার সংসারের হাল ধরবে। তার সে আশা আর পূর্ণ হলো না। অদৃষ্টের ফেরে অনাকাঙ্খিত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই পা হারিয়ে দুই মাস যাবৎ ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আছে। উন্নত চিকিৎসার না পেয়ে দিন দিন তার শারিরীক অবস্থা অবনতি হচ্ছে। নদীর চিকিৎসক হওয়ার বাসনা শেষ হয়ে গেছে চিরতরে। এখন সে প্রাণে বাঁচতে চায়। বেঁচে থাকার মিনতি তার চোখে মুখে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় নদীর পার্শ্ববর্তী একটি হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী মর্জিনা খাতুনের বাসায় বেড়াতে যায়। এক সময় শিশুমনে সে বাসার ছাদে উঠলে সেখানে ফেলে রাখা উন্মুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগের তারে জড়িয়ে পড়ে সে। এ সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। সিলেটের হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার শারিরীক অবস্থার আরো অবনতি হয়। এক পর্যায়ে সেখানকার চিকিৎসক আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য নদীকে গত ২৭ মে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। পরে গত ৪ জুন চিকিৎসার স্বার্থে ডাক্তার বাধ্য হয়ে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটে ফেলেন। সে দিন থেকে নদী আক্তার চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।

স্কুল শিক্ষক আব্দুর রকিব জানান, নদী খুবই মেধাবী একজন ছাত্রী। পড়াশুনায় তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। সে সহপাঠীদের প্রায়ই বলতো বড় হলে সে মানব সেবা করার জন্য ডাক্তার হবে।

নদীর বাবা রফিক মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকে তার চিকিৎসার খরচ জোগান দিয়ে র্বতমানে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে নদীর চিকিৎসা সেবা প্রায় বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। নদীর বাবা তার জায়গা-জমি যা ছিল তা বিক্রি করে দুই মাস যাবৎ মেয়ের চিকিৎসায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে এখন দিশেহারা। নদীর চিকিৎসার খরচ বহন করা তার বাবার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে রফিক মিয়া শেষ সম্বল জায়গা-সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে শিশু নদী এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এমতাবস্থায় অসহায় শিশুটির সুচিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি নদীর জীবন রক্ষার্থে সহযোগীতার হাত প্রসারিত হোক সমাজের বিত্তবানদের এটাই প্রত্যাশ পরিবারের।

Share this post

scroll to top