মহামারির সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা বিশ্ববাসীকে আরো ভয়াবহ খবর দিল মালয়েশিয়া। সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, কোভিড-১৯-এর থেকে আরো বেশি মারাত্মক করোনাভাইরাসের প্রজাতি বা স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে।
‘ডি৬১৪জি’ নামের নোভেল করোনাভাইরাসের ওই নয়া প্রজাতিটি ‘সার্স-কোভ ২’-এর থেকেও ১০ গুণ বেশি ছোঁয়াচে বলে শনিবার দাবি করেছেন মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল নুর হিশাম আবদুল্লা।
ফেসবুকে একটি পোস্টে আবদুল্লার দাবি, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ‘ডি৬১৪জি’-সংক্রমণের তিনটি ঘটনার সন্ধান মিলেছে।
তিনি জানিয়েছেন, সে দেশের এক বাসিন্দা ভারত থেকে মালয়েশিয়ার ফিরে এলে তার মধ্যে করোনার ওই স্ট্রেনের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি, মালয়েশিয়ার রেস্তোরা-মালিকের দেহেও এর সংক্রমণ দেখা দেয়।
এমনকি, ফিলিপাইন থেকে আসা কিছু ব্যক্তিও এতে সংক্রমিত বলে জানা গেছে।
আবদুল্লার দাবি, করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতির অস্তিত্বের অর্থ, বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে যে কোভিড-ভ্যাকসিনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, তার সবক’টিই এই নয়া প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াইতে অক্ষম প্রমাণিত হতে পারে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা জানিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বকে চমকে দিয়েছে রাশিয়া। তবে রাশিয়ার তৈরি করোনা-প্রতিষেধক ‘স্পুটনিক ভি’ কতটা নিরাপদ হবে, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
কারণ, তৃতীয় দফার ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা, সেপ্টেম্বরেই তা বাজারে আনা হবে। তবে মালয়েশিয়ার এই নয়া দাবির পর সেই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়েও ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যদিও আবদুল্লার আশ্বাস, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ছাড়াই তা নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন তারা।
আবদুল্লার কথায়, “এখনও পর্যন্ত জনস্বাস্থ্যে দ্রুত গতিতে নজরদারির জন্য দু’টি ক্লাস্টারে এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। তবে এটা প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা মাত্র। অন্য বহু কেসের ক্ষেত্রেই বহু ফলো-আপ পরীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
আবদুল্লা জানিয়েছেন, এই মারণ ভাইরাসের পরিবর্তিত রূপের ছোঁয়াচ থেকে বাঁচার জন্য জনমানসে আরও বেশি করে সচেতনতার প্রয়োজন।
তার দাবি, নতুন এই মিউটেশনটি এক জন সংক্রমিতের থেকে অতি সহজেই কোভিডের থেকে দশ গুণ বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ রুখতে জনস্বাস্থ্য আরও সুরক্ষিত করার দিকে নজর দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। সুস্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা যাতে সকলে অভ্যাসে পরিণত করেন, নাগরিকদের তার অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে শুধু মালয়েশিয়াতেই নয়, ইউরোপ ও এবং আমেরিকাতেও এই মিউটেশনের অস্তিত্ব মিলেছে বলে জানা গেছে। মালয়েশীয় সরকারের এই আশঙ্কার কথা সত্ত্বেও অবশ্য এতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
হু-এর মতে, এখনো পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে বলা যেতে পারে এই স্ট্রেনটি আরও ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
‘সেল প্রেস’ নামে একটি বায়োমেডিক্যাল জার্নালের দাবি, করোনার যে সমস্ত প্রতিষেধক তৈরি করা হচ্ছে, তাদের কার্যকারিতায় কোনো রকম প্রভাব না-ও ফেলতে পারে এই নতুন মিউটেশন। আনন্দবাজার