‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে দমনমূলক পরিবেশ

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে এখন দমনমূলক পরিবেশ বিরাজ করছে।

সংগঠনটি বলেছে, বিরোধীদলের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা বা সহিংস ঘটনাগুলোর ব্যাপারে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে নির্বাচন কমিশন সেভাবে ভূমিকা নিচ্ছে না। এমন পরিবেশ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ফেলবে বলে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে।

তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। কমিশন বলেছে, বিরোধীদলসহ সব পক্ষের অভিযোগের ব্যাপারে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মূল অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদের ওপর সহিংস হামলা চলছে।

সংগঠনটি মনে করছে, এসব সহিংস হামলার ঘটনার ক্ষেত্রে সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকী পুলিশ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের গ্রেফতার করছে।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্ন তুলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সমালোচকদের ওপর ক্র্যাকডাউন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন মুখপাত্র মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলছিলেন, বিরোধী দলের প্রচারণায় হামলা বা সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

“যখন বিরোধীদলের কেউ প্রচারণা করতে যাচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে যে মারপিট হয়। আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ, ওরা সবাই এসে মারপিট করে। প্রচারণা চালাতে দিচ্ছে না। প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। তখন কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া দরকার যে, কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে-এসব দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। যে সব ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেগুলো কিন্তু আমরা দেখছি না।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনটি তৈরির ক্ষেত্রে ৫০ জনের বেশি রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সাথে কথা বলার পাশাপাশি আদালতের নথি ঘেঁটে দেখেছে বলে জানিয়েছে।

এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ব্যাপক মাত্রায় নজরদারি, মুক্তভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে কর্তৃত্বপরায়ণ পদক্ষেপ চালানো হচ্ছে এবং একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে রাজি নয়। একজন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।

“যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের নেতৃত্বে একটা জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি আছে। তারা কিন্তু প্রত্যেকটা ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট দিচ্ছেন। এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা কিন্তু অ্যাকশনগুলো নিয়েছি। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ করছেন।”

“এটা সত্য যে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু অভিযোগ করার জন্য কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, সেটাও কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না।”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ইউম্যান রাইটস ওয়াচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের বিরুদ্ধে দমনমূলক পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে।

সরকারের একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, বিরোধী দল বিএনপি প্র্রতিদিনই বিভিন্ন অভিযোগ করছে। সেই অভিযোগগুলোই তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিএনপির সাথে একই ভাষায় বক্তব্য দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা উচিত বলে তারা মনে করেন।

“নির্বাচনটা এখানে উৎসবের মতো। মানুষ প্রচন্ডভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত হয়। ব্যাপক মানুষ যখন সম্পৃক্ত হয়, তখন যারা দুর্বল দল তারা কিন্তু আইসোলেটেড হয় বা ভীষণভাবে মারজিনালাইজড হয়। সেটাকে যদি তারা বলে দমনমূলক নীতি, ঐ ধরণের কোনো ঘটছে বলে আমি শুনিনি।”

এদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহিংস হামলার ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলেছে, কোনো সংগঠনের দাবির মুখে নয়, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো অভিযোগ এলেই পুলিশ যাতে নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নেয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top