ভয়াবহ সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র

মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্টের সাধের প্রাচীর প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্বে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হলো না ফেডারেল স্পেন্ডিং বিল। আর তার জেরেই শনিবার দুপুর বারোটা এক মিনিট থেকে তালা পড়ে গেল আমেরিকার রাজকোষে। হাতে গোনা কয়েকটি দপ্তর ছাড়া বন্ধ হতে বসেছে নাসা, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, বিচারবিভাগসহ একাধিক দপ্তরের কাজকর্ম। সবমিলিয়ে বেতন বন্ধের মুখে পড়েছেন আমেরিকার প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মী। অপ্রত্যাশিত এই আর্থিক সঙ্কট মুহূর্তেই ম্লান করে দিয়েছে বড়দিনের ছুটির আনন্দ-আমেজকে। ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা কী করবেন, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না। তার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চাপে ফেলে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। যদিও ট্রাম্পের আশ্বাস, এই আর্থিক অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কিন্তু সঙ্কট মোকাবিলায় তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন, তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ট্রাম্প। বড়দিনের ছুটি কাটাতে তিনি এখন ফ্লোরিডায়। গতকালই তিনি উড়ে গিয়েছেন ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে।

আচমকা আর্থিক সঙ্কটে পড়া আমেরিকার ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। চলতি বছরে এই নিয়ে তিনবার আর্থিক অচলাবস্থার মধ্যে পড়ল বিশ্বের শক্তিশালী দেশ। তবে এবারের সঙ্কটে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে মার্কিন শেয়ারবাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ পার করেছে ওয়াল স্ট্রিট। শুক্রবার ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

আমেরিকায় সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য ও হিউম্যান সার্ভিসেসের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। ফলে বর্তমান আর্থিক অচলাবস্থায় এই তিন দপ্তরের খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাকি প্রায় ২৫ টি দপ্তরের অর্থ বরাদ্দের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। আর শুক্রবারই মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্পকে ঘিরে মার্কিন কংগ্রেসে তুমুল হইহট্টগোল শুরু হয়। ঩বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তাতেই ফেডারেল ‘স্পেন্ডিং বিল’ পাস না করিয়ে মুলতবি হয়ে যায় মার্কিন কংগ্রেস। আমেরিকায় ভোট-যুদ্ধে নেমে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার সেই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন তিনি। এর জন্য প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অর্থ বরাদ্দের সেই প্রস্তাব সেনেটে পাসও করিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ওই প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে এলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। আর তার জেরেই আটকে যায় প্রায় ২৫টি দপ্তরে অর্থ বরাদ্দের ‘স্পেন্ডিং বিল’। ট্রাম্পের বক্তব্য, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে এই আর্থিক সঙ্কট তৈরি করেছেন। তবে সঙ্কট যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয়, তার মোকাবিলা করতে তিনি প্রস্তুত।

ট্রাম্পের এই আশ্বাসে অবশ্য চিড়ে ভিজছে না। ইতিমধ্যেই নাসা, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক দপ্তর, বিচারবিভাগ, কৃষি এবং বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানসহ একাধিক দপ্তরে কাজকর্ম লাটে উঠেছে। নাসার বহু কর্মী কাজে না যেতে পারেন বলে খবর। জাতীয় উদ্যানগুলো খোলা থাকলেও কর্মীরা কী করবেন বুঝতে পারছেন না। শনিবার থেকে বহু উদ্যানের কর্মী কাজে যোগ দেননি। মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের কাজকর্মও শিকেয় উঠেছে। অগত্যা, বড়দিনের ছুটির মরসুমে কাজকর্ম সচল রাখতে কর্মীদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে সরকার চাপ দিতে পারে বলে জানা গেছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top