কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। আর এজন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম আধুনিক, যুগোপযোগী ও প্রায়োগিক করতে হবে।
মন্ত্রী শনিবার রাজধানীর তার সরকারি বাসভবন থেকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরিতে আধুনিক কারিকুলামের ভূমিকা শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক সাত্তার মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, সাবেক শিক্ষা সচিব এন আই খান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক লুৎফুল হাসান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কৃষিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য যোগানো। দিন-দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, অথচ চাষযোগ্য জমি দ্রুত কমছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। এর সাথে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে কোভিড-১৯। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা বা ফুড চেইনকে চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। যুগোপযোগী, আধুনিক ও প্রায়োগিক কারিকুলামের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিকে অধিকতর লাভজনক করতে হলে কৃষিপণ্যের বিপণন ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে হবে। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে কৃষিপণ্যের টেকসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রক্রিয়াজাত করে মূল্য সংযোজন করতে হবে। সেজন্য, উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস ও কারিকুলাম যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, বাণিজ্যিক কৃষি কৌশল জ্ঞান সম্বলিত সিলেবাস প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ এবং কৃষিবিদগণ বাংলাদেশের সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কৃষিতে আজ দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য যোগানো। কারণ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। বতর্মান সরকারের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, কৃষির ইতিহাস ও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে কারিকুলামে নিয়ে আসতে হবে। কৃষির উন্নয়ন করতে হলে এর বিবর্তন সম্পর্কে জানা জরুরি। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কৃষক ও কৃষি গ্রাজুয়েটরা কি করে সফলভাবে মোকাবেলা করবে তাও সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক লুৎফুল হাসান বলেন, সিলেবাসে প্রতিনিয়তই নতুন বিষয় সংযোজন করা হচ্ছে, তবু কিছুটা দুর্বলতা আছে। সময়ের সাথে-সাথে অবশ্যই এটিকে পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করতে হবে।সেমিনারে বিভিন্ন শিল্প ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করেন বক্তাগণ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ার জন্য সিলেবাস, কারিকুলাম, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করে আধুনিক ও প্রায়োগিক করার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
কৃষিকে টেকসই করার জন্য কৃষির গ্রাজুয়েটদের বাণিজ্যিকীকরণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কারিকুলামে মার্কেটিং, শিল্পোদ্যোগ, সাপ্লাই চেইন, যোগাযোগ ও নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সূত্র : বাসস