বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশবিষয়ক একাধিক বইয়ের লেখক উইলিয়াম বি মাইলাম বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ বিষয়ে বলেছেন, এটা অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হলে বাংলাদেশ এক দলীয় সরকার থেকে এক দলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ সহিংসতার দিকে ধাবিত হতে পারে, আর এ কারণে সরকার বিরোধীদের প্রতি দমনাভিযান শুরু করবে যেমনটি শুরু করেছিল পাঁচ বছর আগে। এতে বিরোধী দল বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার উইলিয়াম মাইলাম বাংলাদেশী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। নির্বাচনের পরিবেশ বিষয়ে উইলসন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাৎকারে আরো অংশ নেন এ সংস্থার এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি পরিচালক মাইকেল কুগলম্যান।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের ভূমিকা, বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার পরিস্থিতি তুলে ধরে মুশফিকুল ফজলের এক প্রশ্নের জবাবে উইলিয়াম মাইলাম জানান, আমার প্রথম মত হচ্ছ এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বলে মনে হচ্ছে না। আপনি যে বর্ণনা দিলেন, আমিও বাংলাদেশে অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে এ ধরনের অনেক কিছু জেনেছি। অবশ্যই এটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নয়।
মার্কিন কংগ্রেস বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস করেছে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মাইলাম জানান, আমি আশা করি এটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ সঠিক পথে চলছে এটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুবই জোরালোভাবে অনুভব করছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে জানতে চাইলে উইলিয়াম মাইলাম জানান, গত পাঁচ বছর আমরা একদলীয় সরকার দেখেছি। সামনে হয়তো এক দলীয় রাষ্ট্র হবে। আমরা সে নির্বাচনের পর আশা করেছিলাম শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন হবে, কিন্তু হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এ নির্বাচন বাংলাদেশকে আরেকটি সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর পাঁচ বছর আগে সরকার যেমন বিরোধী দলের প্রতি দমনাভিযান শুরু করেছিল সেটা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং বিরোধী দল নির্মূল হয়ে যেতে পারে আক্ষরিক অর্থেই।
সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে শুধু যে, সরকারকে দমনের দিকে ঠেলে দেবে তা নয় বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনও রকেট গতিতে বাড়বে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার ক্ষমতায় থাকুক।
নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের দাবির বিষয়ে মাইলাম জানান, আমি আশা করি তারা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বিষয়ে তাদেরও কোনো বক্তব্য থাকতে পারে। আমি জানি না তারা কী বলবে।
হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অতীতে শেখ হাসিনা বিএনপিকে অনেক আক্রমণ করে কথা বলেছেন জামায়াতসহ ইসলামী দলের সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে। কিন্তু তিনি নিজে এখন হেফাজতের মতো ইসলামিস্টদের সাথে সম্পর্ক করলেন। অতীতেও তিনি ইসলামপন্থীদের সাহায্য নিয়েছেন। হেফাজতের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রমাণ করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কতটা মরিয়া।
মাইকেল কুগলম্যান এক প্রশ্নের জবাবে জানান, আমি অবাক হয়েছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতি নগণ্যসংখ্যক নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর খবরে। আমার মনে হয় মাত্র ৩২ জন পাঠাচ্ছে। এটা একটা নির্দেশক, যুক্তরাষ্ট্র কতটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এ নির্বাচন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না।
২০১৪ সালের নির্বাচন, ভারত ও চীনের অবস্থান এবং আগামী নির্বাচনে তাদের ভূমিকা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাইকেল কুগলম্যান জানান, ভারত বাংলাদেশের শাসক দলের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তারা নিবিড়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। অবশ্যই চীন বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তবে যে সরকারই আসুক চীন তার সাথে কাজ করবে।