অর্থনৈতিক করিডরের আড়ালে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে চীন-পাকিস্তান। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নতির উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই প্রকল্প শুরু করেছে চীন। মুখে অন্তত বলছে তাই। কিন্তু এই ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা। বেইজিং চাইছে, পাকিস্তানকেই যুদ্ধবিমান বানানোর ঘাঁটি বানাতে, যাতে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে সহজে বিমান বিক্রির ঠিকাদারি পাওয়া যায়। ‘চাঞ্চল্যকর’ এই খবর ফাঁস করেছে মার্কিন সংবাদপত্র।
বছর শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, পাকিস্তানের জন্য আর একটি ডলারও খরচ করতে রাজি নন তিনি। উদ্দেশ্যও স্পষ্ট ছিল। জঙ্গি দমনে পাকিস্তান যেন আমেরিকাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তত দিনে পাকিস্তান আমেরিকার ‘বিকল্পের’ খোঁজ পেয়ে গেছে। আর সেই বিকল্পের নাম চীন। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার কথা বলা হলেও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পিছনে লুকিয়ে আছে যুদ্ধবিমান বানানোর গোপন বোঝাপড়া, যার অংশীদার চীন এবং পাকিস্তান। যে কারণে এই প্রকল্পে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করছে চীন, যার পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৬,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, বানানো হবে আরো অনেক অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র এবং যন্ত্রাংশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে।
অভিযোগ, ভারতকে কোণঠাসা করতে একেবারে কোমর বেঁধে নেমেছে চীন। ইউরোপ, এশিয়া আর আফ্রিকা জুড়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামে যে রাস্তা ও রেলপথ বানানোর প্রকল্প শুরু করেছে বঁইজিং, ইসলামাবাদকে তার অংশীদার করে নিতেই রাখা হয়েছে চীন- পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। চীন থেকে এই রাস্তা ইসলামাবাদ ও পেশোয়ার হয়ে সরাসরি পৌঁছবে গদর সমুদ্রবন্দর। এই রাস্তা বানাতে পারলে নিশ্চিতভাবেই সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বেইজিং। এর ফলে পশ্চিম চীনের সঙ্গে আরব সাগর যুক্ত হয়ে যাবে।
ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই অর্থনৈতিক করিডরের কাজ শুরু করে দিয়েছে বেইজিং আর ইসলামাবাদ। এই রাস্তা ও রেলপথের একটি অংশ যাচ্ছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে মেনে নেয় না ভারত। আপত্তি ছিল সেই কারণেই।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু যুদ্ধবিমান বানানোই নয়, পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে অত্যাধুনিক উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামরিক সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করে ফেলেছে চীন। সে ক্ষেত্রে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের প্রান্তিক বন্দর গদরকেই সামরিক সাবমেরিনের জ্বালানি ভরার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে বেইজিং। এর ফলে ভারত মহাসাগরের উপর নির্ভরতা কমবে চীনের। জানা গেছে, সামরিক যন্ত্রাংশ বানাতে এই বছরের শুরুতেই পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন চীনা প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মধ্যেই একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয়া হয়। মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়নি, ঠিক কী ধরনের যুদ্ধবিমান বানাতে চলেছে চীন ও পাকিস্তান।