যমুনাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি সম্পূর্ণ সরে যেতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নান জানান, গতকাল মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিকাল ৪টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরস্থিতির উন্নতি হয়েছে।.
তবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যার পানি থাকায় দুর্গত এলাকার মানুষের খাদ্য সংকটসহ নানা দুর্ভোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সড়কে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ, গো চারণ ভূমি, বসতবাড়ী, গ্রামীণ হাটবাজার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যার ফলে মানুষের অর্থনীতিতে বড় একটি ধাক্কা লেগেছে।
অন্যদিকে দুর্গত এলাকায় মানুষ কোনও মতে উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিলেও অধিকাংশ পরিবার ত্রাণের আওয়াতায় আসেনি। গো খাদ্যের অভাব ও গরু চুরির আতঙ্ক নিয়ে দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই দিন পার করছেন বানভাসিরা।.
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, জেলায় নগদ ৩১ লাখ টাকা ও ৯১০ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ৬ লাখ টাকার এবং গো খাদ্য ১৭ লাখ টাকার বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় অনেকেই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে যাদের বসত ঘরে পানি রয়েছে তার এখনো উঁচু বাধ, সড়ক ও সেতুর ওপর আশ্রয় নিয়ে আছে।
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস জানান, দুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কাজ ৫৯ টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।.
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে জেলার সাতটি উপজেলার ১২ হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে নষ্ট গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানায়, বর্ন্যাদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে । ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য ব্যাক্তি কেউ বাদ পড়বেন না । জেলা প্রসানের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুর্গদের চার হাজার পিস তৈরি করা রুটি সঙ্গে গুড় দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ হচ্ছে । আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে।.
এছাড়াও টাঙ্গাইলে যমুনা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বন্যার পানি কমতে শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। বর্তমানে এ নদীতে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঝিনাই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও বংশাই নদীতে ৯ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।.
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, বাসাইল, গোপালপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ঘাটাইল, সখীপুর, ধনবাড়ী ও মির্জাপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় ৬ লাখ ১৩ হাজার ২২৭জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বানভাসী মানুষদের মাঝে এক হাজার ৫৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ১২ লাখ টাকার গবাদি পশুর খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। .
এদিকে পানিবন্দি মানুষগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে উঁচু বিদ্যালয় বা বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। পানিবন্দি লোকের সংখ্যার হিসেবে ত্রাণের পরিমাণ কম হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। .
পাবনায় একদিন স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার পর কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। অন্যদিকে বিপৎসীমার প্রায় শত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, গেল একদিন কোনও পরিবর্তন না থাকলেও আবার কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সকালে যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ির মথুরা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।.
তবে এখনও পানিবন্দি হয়ে রয়েছে পদ্মা ও যমুনা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। নদী ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। বানভাসি এ সকল মানুষের পাশে সহায়তা দিচ্ছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।