আদালতে ঈদের পর রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানির প্রার্থনা জানিয়ে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বলেছেন, ‘গত ১২ থেকে ১৩ দিন ধরে আমি খুব চাপের মধ্যে আছি। আমি আর পারছি না। আমি অসুস্থ। রিমান্ড শুনানিটা ঈদের পর হলে ভালো হয়।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি তো অন্যায় করেছি। সব অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের সব টাকা-পয়সা পরিশোধ করে দেবো। ’
রোববার (২৬ জুলাই) তার বিরুদ্ধে চার মামলার রিমান্ড আবেদন শুনানির একপর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাহেদ এসব কথা বলেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে সাহেদ ও রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজকে আদালতে হাজির করা হয়। দুইঘণ্টা সময় আদালতের হাজতখানায় অবস্থানের পর বেলা ১২টার দিকে সাহেদকে আদালতে তোলা হয়।
তার বিরুদ্ধে এদিন মোট সাতটি মামলায় শুনানি হয়। শুরুতেই রিজেন্টের মামলায় রিমান্ড শেষে তাকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আবেদন করে র্যাব। আবেদন মঞ্জুর করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাকে সাতক্ষীরায় গ্রেফতারের সময় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় জেলার দেবহাটা থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় এবং জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় র্যাবের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
সবশেষ তার বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানায় বিভিন্ন জনের করা আর্থিক প্রতারণার চার মামলায় ১০ দিন করে মোট ৪০ দিনের রিমান্ড শুনানি হয়। বিচারক প্রত্যেক মামলায় ৭ দিন করে ২৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া তার সহযোগী মাসুদ পারভেজকে তিন মামলায় ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব।
কোমরপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরকা পরে ছিলেন। সাহেদ গ্রেফতার এড়াতে গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন, সাদা চুল কালো করেছিলেন। গ্রেফতারের পর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সাহেদকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর উত্তরায় তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান শেষে রিজেন্ট সাহেদের আটকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এ সময় সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কীভাবে তাকে ধরা সম্ভব হল সেই বিস্তারিত তথ্য দেন র্যাব ডিজি।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, সে (সাহেদ) করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের নামে প্রতারণা করছিল। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক করোনা পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, বিনামূল্যে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নেয়া হতো এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১০০০ গ্রহণ করতো। আইসিইউতে ভর্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতো। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিলও জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।