নির্বাচনী সহিংসতা বিয়ে বাড়ির ঝগড়ার মতো : ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিন যে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, তার সাথে বিয়ে বাড়ির ঝগড়ার তুলনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম। তারমতে, এই ধরণের ঘটনা না ঘটলে মাঠে উত্তাপ থাকে না, ভালো লাগে না। শুক্রবার রাজশাহীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করে তিনি।

রফিকুল ইসলাম বলেন,  ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই আছে যে… এমনকি রাজনীতি ছাড়াই, আমরা এমনিতেই একটু …মারামারি… আমরা একটু উত্তপ্ত, গরম বাক্য বিনিময় করতে অভ্যস্ত।’

‘আর যখন শিডিউল ঘোষণা করা হয়, তখন হতেছে আরেকটু গরম হয়ে যায়। আর এই উত্তাপ না থাকলে পরে হতেছে ভালো লাগে না।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বিয়ে বাড়ির সংস্কৃতির প্রসঙ্গ টেনে সাবেক সচিব রফিকুল বলেন, ‘একটা বিয়ে বাড়িতে দেখেন, সামান্য এটা নিয়ে… ওই যে গেইট ধরে, গেইট ধরার সময় হতেছে… বর এবং কনে পক্ষের মধ্যে এই যে কথা কাটাকাটি শেষ পর্যন্ত মারামারি হয়, তারপরে বিয়েটাও হয় কিন্তু।’ ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার শুরুর পর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নোয়াখালী ও ফরিদপুরে নির্বাচনী সংঘাতে ক্ষমতাসীন দলের দুই কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েক ডজন প্রার্থীর গাড়িবহর ও সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে গত দুই সপ্তাহে।

বিএনপি নেতারা এসব ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, এগুলো বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ ফল।

ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার যে দাবি বিএনপি জানিয়ে আসছিল, সে প্রসেঙ্গে এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল বলেন, নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা পুলিশ, র‌্যাব বা সেনাবাহিনী, কারও হাতেই বিচারিক ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ‘যার হাতে অস্ত্র থাকে তার কিন্তু বিচারিক ক্ষমতা থাকে না। কারণ এটা বাংলাদেশের সংবিধানের জন্য স্ববিরোধী।’

রফিকুল বলেন, ‘বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে কেউ থাকে না। যদি কোনো অঘটন ঘটে তা হলে সেনাবাহিনী যেমন যে কোনো লোককে গ্রেপ্তার করতে পারে, সহিংস ঘটনা ঘটলে তারা ফায়ারও করতে পারে। পরে যদি প্রয়োজন হয়, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে… নিতে পারবেন।

‘আর জীবন রক্ষার জন্য, যদি তার জানমালের ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে এমনিতেই উনি ফায়ার ওপেন করতে পারেন, অ্যারেস্ট করতে পারেন।’ আদালতের নির্দেশে বেশ কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বিএনপি পুনঃতফসিলের যে দাবি তুলেছে, সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আইনি বিষয় খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার আগে ‘নির্বাচনে নারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা’ বিষয়ক এক সচেতনতামূলক কর্মশালায় বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘শুধু নারী নয়, সকলে যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন, তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা আমরা নেব।’

নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে এ কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার নূর উর রহমান এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বক্তব্য দেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top