নেত্রকোনার দুর্গাপুরে দিন দিন বেড়েই চলছে যানবাহনের দৌরাত্ম্য । দিনে রাতে প্রায় ২৪ ঘন্টাই যানবাহনের অত্যাচারে সড়ক দিয়ে চলাচল করা এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উপজেলার বাসিন্দাদের ।
বিশেষ করে পৌর শহরের রাস্তাঘাট গুলো রীতিমত দখল করে নিয়েছে অবৈধ লড়ি থেকে শুরু করে ভারী যানবাহনগুলো। চলছে বৈধ উপায়ে ইজারা নিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব ।বালুখেকোদের অত্যাচারে বিগত ১০ বছরে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ দুর্গাপুর পৌরবাসীর । আর দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে অত্যাচারের তীব্রতা ।
একদিকে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সোমেশ্বরী নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে অন্যদিকে এই নদীর বালু পরিবহনের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য বাইপাস একটি সড়কের দাবি জানিয়ে আসছে পৌরবাসী । কিন্তু কে শোনে কার কথা সবাই যেন নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত এমনটাই মনে করছেন পৌরবাসীরা ।
পৌর শহরের তেরি বাজার, কালিবাড়ী, উকিলপাড়া, প্রেসক্লাব মোড়, উপজেলা মোড়, কলেজ রোড, সুসং আদর্শ বিদ্যানিকেতন মোড়, আত্রাইখালী রোড়, সাধুপাড়া রোড, দেশওয়ালী পাড়া, এমপির মোড় কাচারী মোড়, দক্ষিণপাড়া মোড় সহ প্রায় সব সড়কেই অতিরিক্ত বালুবাহী যানবাহন চলায় তীব্র যানজট লেগে থাকে প্রতিদিনই ।
ফলে এই সড়ক দিয়ে পথচারী ও ছোট যানগুলো চলাচল করা রীতিমতো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
দিনের বেলায় অবৈধ লড়ি গাড়ি চলাচলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেন না লড়ি চালকরা । যে যার মতো দিনে রাতে অবৈধ এই যান চালিয়েই যাচ্ছে ।
এই নিয়ে গত কিছুদিন আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার এমপি অবৈধ যান বন্ধের দাবিতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি ডিউলেটার প্রেরণ করেন ।
পূর্বেও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন, মানববন্ধন, মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করলেও এখন পর্যন্ত সঠিক কোনো সমাধানই আসেনি । উল্টো অবৈধ যানের তীব্রতায় সড়কে সবসময় লেগে থাকছে যানজট ।
এই যানজটের কবলে পড়া থেকে বাদ যায় না হাসপাতালে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্সও । যানজটের আটকে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পরছেন না পথচারীও । তার উপর যানজটের তীব্র শব্দে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ । দিনে যানজট আর রাতে তীব্র শব্দ দূষণ এই নিয়েই চরম ভোগান্তিতে পৌরবাসীর ।
পৌর বাসিন্দাদের মতে সময়ের সাথে সাথে দুর্গাপুর বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ছে । এখানে মানুষের থেকে যানবাহনের সংখ্যায় বেশি । তারা আরো জানান যেভাবে এই অঞ্চলটিতে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে বেশিদিন লাগবে না বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে । তাই দ্রুতই বালুমহাল বন্ধসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নগরবাসীরা ।
পরিবেশ কর্মী চারণ গোপাল চক্রবর্তী জানায়, পৌর শহরের সড়কগুলোর যানজট নিরসনে প্রথমেই লরি গুলো বন্ধ করতে হবে । এক্ষেত্রে আমরা দেখছি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও লাইসেন্স বিহীন লরি গাড়িগুলো চলাচল করছে যার ফলে সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে ।শব্দদূষণ ও রাস্তাঘাটের চলমান সংকট মূলত এই লরির জন্য। কৃষি জমিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হলোও সড়কগুলোতে এর অবাধ বিচরণ ।তাই এই যানগুলো নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সকল প্রশাসনের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে । নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যদি এই গাড়িগুলো বন্ধ করা যায় তাহলেই ফিরে আসবে শৃঙ্খলা ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, আমরা নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে লড়ি গুলোকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । তবে এক্ষেত্রে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে সহজেই সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে । ইতিমধ্যে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত লরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । তারপরও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কে বের হয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি ।