করোনাভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে ময়মনসিংহে গত ৩ সপ্তাহে মারা গেছেন ৫৯ জন। এছাড়া সারাদেশে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে ১ হাজার ৮৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। টানা ৫ সপ্তাহ বাড়ার পর গত তিন সপ্তাহ ধরে এমন মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। সর্বশেষ সপ্তাহে এমন মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের। এর আগের সপ্তাহে এটি ছিল ১১০ জন এবং তার আগের সপ্তাহে ছিল ১৭২ জন।
১২ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিপিও। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দিচ্ছে তারা।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই মারা গেছেন ৫৮৮ জন।ঢাকা বিভাগে ৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।খুলনা বিভাগে ২৫১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯৪ জন, বরিশালে ২২৩ জন, সিলেটে ৯৭ জন, রংপুর ৮২ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৯ জন মারা গেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে আজ বৃহস্পতিবার নতুন প্রতিবেদন দিয়েছে বিপিও। বিপিও বলছে, ৮ মার্চ থেকে করোনার বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।এতে দেখা যায়, ২২ থেকে ২৮ মার্চের সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।পরের সপ্তাহে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ জনে।এরপর এটি বাড়তে থাকে।এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২১ থেকে ২৭ জুন।
বিপিও গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করছেন। ফলে প্রকাশিত পুরোনো তথ্যও মাঝে মধ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর আগে মে মাসের শেষ প্রতিবেদনে বড় আকারের সংশোধন করা হয়। তখন উপসর্গে মোট মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে কমানো হয়। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংশোধনের পর এটি বাড়ছে।
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনা রোগীর মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাঁরা করোনায় সংক্রমিত নাও হতে পারেন।একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে ৮৫ শতাংশের করোনা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
গবেষকেরা বলছেন, জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন মিলে ২৫টি গণমাধ্যম থেকে প্রতিদিন তথ্য নিচ্ছে বিপিও।এরপর এসব তথ্য থেকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যটা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।তবে মাঠপর্যায় থেকে এসব তথ্য যাচাই করা হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয় প্রতিদিন।তবে করোনার উপসর্গ বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয় না।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরও কয়েকটি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছে বিপিও। তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনা নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ১১ জুলাই পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এ ছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।জরিমানা করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৯ জনকে।
বিপিও প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাকে কেন্দ্র করে ২৩৪টি নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্ক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে।এর মধ্যে ২২ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৩৪ শতাংশ এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৪ শতাংশ।এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা ও যথাযথ চিকিৎসাসামগ্রীর দাবিতে হয়েছে ১২ শতাংশ বিক্ষোভ। করোনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ১৩৭টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে।এতে ২০ জন মারা গেছেন। ৫৫৩ জন আহত।