জামালপুরে দুই আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্য, নির্বাচনী অফিস বন্ধ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে দুইটি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশে আসন্ন নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে বিএনপি প্রার্থী এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে বিএনপি প্রার্থী ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা বন্ধ করে দিয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস, প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ।

জানা গেছে, ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষে সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমের এবং দুদকের মামলায় সাজা হওয়ায় এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ওই দু’জনই তাদের প্রার্থিতার বৈধতা ফিরে পান। যথারীতি ১০ ডিসেম্বর ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন তারা।

পরে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়নপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জামালপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। মিল্লাতের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনের শুনানি শেষে ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মিল্লাতের করা আবেদনের শুনানি শেষে ১৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। ফলে তিনি এবার আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব একেএম মুসা বলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমাদের প্রার্থী মিল্লাতের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে সেহেতু এ উপজেলায় ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার সকল কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের প্রার্থী মিল্লাত আমাকে জানিয়েছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তো আর কিছুই করার নেই। তবে এ আসনে মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হওয়া আরও দুই প্রার্থী ছিলেন। এখন দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে ওই দু’জনের মধ্যে যেকোনো একজনকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী করা যায় কি না-এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এদিকে ধানের শীষ প্রতীকের বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর আমরা স্তম্ভিত হয়েছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের প্রার্থী মিল্লাতের জয় নিশ্চিত জেনে ঈর্শান্বিত হয়েই কোর্ট-কাচারি করে তাকে হেরাজমেন্ট করলো।

এদিকে জামালপুর-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শূন্য হওয়ায় এখন ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকের সিরাজুল হক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের এমএ ছাত্তার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির কাঁঠাল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কুঁড়ে ঘর প্রতীকের মোহাম্মদ সুরুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ।

অন্যদিকে জামালপুর-৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শূন্য হওয়ায় এখন চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুরাদ হাসান, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মোখলেছুর রহমান বস্তু, বিএনএফ-এর টেলিভিশন প্রতীকের মোস্তফা বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আলী আকবর।

দলীয় সূত্র জানায়, জামালপুর-১ আসনে তিনজন প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয় বিএনপি। তারা হলেন, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম, সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও তার পুত্র শাহাদাৎ বিন জামান। পরে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত। ৯ ডিসেম্বর আব্দুল কাইয়ুম ও শাহাদাৎ বিন জামানের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাহার হয়ে যায়। অন্যদিকে জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম।

প্রার্থিতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম বলেন, আমি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম। ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশে আমার প্রার্থিতার বৈধতা স্থগিত করায় আমি বিস্মিত হয়েছি। রাষ্ট্র যদি একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেয়, এখানেই আমি নির্বাক। এরপরও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আমি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবো।

অন্যদিকে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের কাছে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের কপি আমাদের কাছে এখনও আসেনি। আদেশের কপি আমাদের দপ্তরে পৌছালে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো। তবে এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাতের আর নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top