বেন স্টোকসকে কি আপনার রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ মনে হয়? সত্যিই কি তাই? ক্রিকেট মাঠে ইংলিশ এই ক্রিকেটার নিবেদন সাধারণ কোনো মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। ব্যাট হাতে দলকে জয়ের সুবাস দেওয়ার পর, বল হাতেও অধিনায়কের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ের নাম স্টোকস। আর ফিল্ডিংয়ে, সে বিস্তারিত পরেই দেওয়া যাবে। তবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে একজন অতিমানবীয় স্টোকসের জন্যই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় টেস্টে হারিয়ে উইজডেন ট্রফিতে এখনো টিকে আছে স্বাগতিকরা।
সাউদাম্পটনে হারের প্রতিশোধ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিয়েছে ইংল্যান্ড। অধিনায়ক জো রুট ফেরার ম্যাচে ১১৩ রানের জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। আর এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান স্টোকসের। প্রথম ইনিংসে তার ১৭৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৪৬৯/৯ (ডিক্লে.) স্কোর দাঁড় করায় ইংল্যান্ড। জবাবে ২৮৭ রানে থামে উইন্ডিজ ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান তোলার তাগিদে ওপেনিংয়ে স্টোকস। এবার ৫৭ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে ১২৯/৩ (ডিক্লে.) পুঁজি দেয় স্টোকস। শেষদিন সফরকারীদের সামনে দাঁড়ায় ৩১২ রানের লক্ষ্য। ম্যাচ বাঁচাতে ৮৫ ওভার পার করতে হতো উইন্ডিজদের। তবে ম্যাচের আর ১৫ ওভারের মতো বাকি থাকতে ১৯৮ রানে থামতে হয় তাদের।
সাউদাম্পটনের প্রথম টেস্টে একাদশে সুযোগ পাননি স্টুয়ার্ট ব্রড। সে ম্যাচ চলাকালীন নিজের ক্ষোভও উগড়ে দিয়েছিলেন এই ইংলিশ পেসার। তবে সব রাগ যে দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপর ঝাড়বেন চতুর্থ দিন বিকালের আগে সেটি যেন বুঝাই যাচ্ছিলো না। এই ডানহাতি পেসারের বোলিং তোপে শেষ দিন দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ছন্নছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৩১২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চাশ রানের আগে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। যার মধ্যে তিনটিই ব্রডের শিকার। অন্য উইকেটটি নিয়েছেন ক্রিস ওকস। ব্রড ফিরিয়েছেন ক্যাম্পবেল (৪), হোপ (৭) এবং চেজকে (৬)। আর ব্র্যাথওয়েটকে ১২ রানে ফিরিয়েছেন ওকস।
এরপর পঞ্চম উইকেটে মাঠে জমাট জুটি গড়েন ব্ল্যাকউড এবং ব্রুকস। দুজনের শতরানের জুটিতে ইংল্যান্ড শিবিরে হতাশা ঘিরে ধরে। কিন্তু যে দলে স্টোকস থাকেন, তাদের আবার ভয় কিসের। পুরো ম্যাচে অমানুষিক পরিশ্রম করে খেলে যাওয়া স্টোকসের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক রুট। স্টোকসও বিরতি ছাড়া টানা আট ওভার করেন। শরীর তখন আর চলছেই না। এমন সময় তার বলে ব্ল্যাকউড মিড অফের দিকে একটা বল ঠেলে দেন। খালি মিড অফের দিকে ছুট লাগান স্টোকস, শরীরে একবিন্দু শক্তিও যেন অবশিষ্ট রাখতে চাইলেন না। বোলিং করে ৭০-৭৫ গজ দৌড়ে বাঁচান বাউন্ডারি। যদিও দৌড়ে চার রান নেন ব্ল্যাকউড-ব্রুকস।
তবে স্টোকসের এমন পাগলাটে কাণ্ডে বদলে যায় ইংলিশ শিবির। চাঙা হয়ে উঠে মনোবল। সেই ওভারে স্টোকস ব্ল্যাকউডকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান। পরের ৬০ রানের মধ্যে বাকী পাঁচ উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় সফরকারী উইন্ডিজকে। উল্লেখ্য, স্টোকস এই সিরিজে সর্বোচ্চ রান (৩৪৩ রান) এবং উইকেটের (৯, গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে) মালিক।
ক্রিকেটের প্রাচীন ফরম্যাটের আবেগ, রোমাঞ্চ সাউদাম্পটনের পর ফিরে আসলো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও। অসাধারণ স্টোকসের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে উদ্বুদ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে সিরিজে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখলো ইংল্যান্ড! রোমাঞ্চের এই গল্প দেখা যাবে কি শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সিরিজের শেষ টেস্টে!