করোনায় তছনছ হয়ে গেছে সুশৃঙ্খল শিক্ষাপঞ্জি। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ে শিক্ষাপঞ্জিতে যে শৃঙ্খলা ফিরেছিল গত চার মাসে মহামারীর আঘাতে তাতে এখন লেজেগোবরে অবস্থা। শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা খাতের সর্বত্রই অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৭ মার্চ থেকে অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে চার দফায় স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়ানো হলেও কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা এখনো নিশ্চিত নয়। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
এ দিকে চলতি বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তাও অনিশ্চিত। এই পরীক্ষা গত পয়লা এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বারবারই বলছেন, করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এইচএসসি বা সমমানের এই স্তরে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অভিভাবকদের মধ্যেও চরম উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
অন্য দিকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শ্রেণীর ক্লাস পরীক্ষাও বন্ধ। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ধরে রাখতে সংসদ টিভির মাধ্যমে প্রাথমিকের ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস চালু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিও) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সংসদ টিভির ‘ঘরে বসে শিখি’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিদিন একাধিক ক্লাস হচ্ছে। করোনার এই সময়ে কোনো পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
করোনার আঘাতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়বে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা। আশঙ্কা করা হচ্ছে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী কয়েক বছর হয়তো এসব পাবলিক পরীক্ষার আগে থেকে মেনে আসা সময়সূচিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আগামী বছর এসব পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত এখনি পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এ ছাড়া আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আর চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা যেখানে এখনো শুরুই হয়নি সেখানে আগামী বছরের পরীক্ষা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় রয়েছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক যুগ ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় একটি শৃঙ্খলা ফিরেছে। বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট তারিখে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা শুরু এবং শেষ হওয়া, নির্দিষ্ট তারিখে ফলাফল প্রকাশ হওয়া, কলেজে ভর্তি এবং নির্দিষ্ট তারিখে ক্লাস শুরু হওয়া। এ ছাড়া নতুন বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেয়াও সরকারের একটি বড় সফলতা। কিন্তু করোনার কারণে এখন শিক্ষার সব সেক্টরেই একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।
অবশ্য শিক্ষাপঞ্জির এই বিশৃঙ্খল অবস্থাকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংসদ টিভিতে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। স্কুলের সাময়িক (ষান্মাসিক) পরীক্ষা স্থগিত করা হলেও করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ পর্যন্ত করা হবে। সিলেবাসে কাটছাঁট করে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজও শুরু করেছে। একই সাথে চলতি বছরের পিছিয়ে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন এনে এই পরীক্ষাও নেয়া হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির উন্নতির ওপর।