আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদুল আযহা (কোরবানীর ঈদ)। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো শেরপুরের পশু খামারিরা ও শখের বশে পশু পালন কারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের পশু বিক্রি করা নিয়ে। এবার কোরবানির পশুর হাট কাঁপাতে আসছে শেরপুরের নকলা উপজেলার ‘বাংলার বাহাদুর’ নামে এক বিশালকার ষাঁড়।
কালচে লাল রঙের ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেশী জাতের ষাঁড় ‘বাংলার বাহাদুর’ শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী খন্দকারপাড়া এলাকার মৃত ইউনুস আলীর ছেলে মো. আমিনুল ইসলামের পালিত ষাঁড়ের নাম। এমন নাম রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, শখের বশে পালিত ষাঁড়টি নিজের গাভীর ও সম্পূর্ণ দেশীয় জাতের। তারা বলেন, অতীতে দেশীয় জাতের এতবড় ষাঁড় তারা দেখেনি। তাদের দেখা দেশীয় ষাঁড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশী ষাঁড় এটি। তারা জানান, বাংলার বাহাদুরের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৩৬ মণ (সাড়ে ১৪শ’ কেজি)। বাছুর অবস্থা থেকেই এটিকে জেলার সেরা বড় ষাঁড়ে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আমিনুল ইসলাম। তাই এ বিশাল দেহী এ ষাঁড়টির নাম ছোট কালেই রাখা হয়েছে বাংলার বাহাদুর।
শান্ত প্রকৃতির বাংলার বাহাদুরকে দেখতে আমিনুল ইসলামের বাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ভিড় করছেন। কেউ প্রাইভেটকার বা মোটর সাইকেল বা নিজস্ব কোন পরিবহণ দিয়ে আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গেলেই স্থানীয়রা তার বাড়িতে ভিড় করেন। তখন স্থানীয়রা মনে করেন আগতরা হয়তোবা বাংলার বাহাদুরকে কিনতে এসেছেন। তাই মুহুর্তের মধ্যে ভিড় জমিয়ে ফেলেন স্থানীয় জনগন ও দর্শনার্থীরা।
আমিনুল ইসলাম বলেন, বাহাদুরকে গরু মোটাতাজা করণের ফিড কিনে খাওয়ানোর মতো আমার সামর্থ নেই। তাই সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বাংলার বাহাদুরকে বড় করা তুলেছি। বাহাদুরকে বর্তমান অবস্থায় আনতে সময় লেগেছে প্রায় ৫ বছর। তিনি আরও বলেন, নকলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি জানান, গরুর ওজন ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক (ব্যালেন্সড) সুষম খাবার খাওয়ালে অর্থ ও ঝুঁকি দুটোই কমবে এবং নিরাপদ মাংস উৎপাদিত হবে। তাই বাংলার বাহাদুরের খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে- পরিমিত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবুজ ঘাস, গাছের পাতা, খড়, গমের ভূষি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটা গুড়, মিষ্টি লাউ, গোল আলু, চালের কুড়া, লবণ ও প্রয়োজন মতো পানি।
তাছাড়া বাংলার বাহাদুরকে নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে রাখা, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত কিছু সময় হাঁটানো, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রুটিন মতো ভ্যাকসিন দেওয়া ও কৃমির ওষুধ খাওয়ানোসহ সবকিছুই করা হচ্ছে দেশীয় ব্যবস্থাপনায়। বাহাদুরকে মোটাতাজা ও আকর্ষণীয় করতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ঔষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানান বাহাদুরের লালন পালনকারী আমিনুল ইসলামসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বাংলার বাহাদুরের বিক্রি দাম নিয়ে তিনি বলেন, বাজার অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। যেকোন পশুর দাম সাধারণত ক্রেতা ও পশু সরবরাহের উপর নির্ভর করে। তবে আমি আমার বাংলার বাহাদুরের দাম প্রথমে ২৮ লাখ টাকা চাইলেও, করোনা ভাইরাসের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আপাতত ২৩ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। গত বছর কোরবানী ঈদের বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে গেল, ন্যায্য দাম না উঠায় বিক্রি করেন নি বলে জানান ষাঁড়টির মালিক আমিনুল। তবে এবছর আগ্রহী ক্রেতার সাথে আলাপ আলোচনা করে বেচা-কেনা হতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি তার লালিত প্রিয় বাংলার বাহাদুরকে শেরপুর জেলার কারো কাছে বিক্রি করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যয় ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পেলে শেরপুর জেলার কারো কাছে বিক্রি করতে পারলে আমি বরং খুশি হবো। নতুবা অবশ্যই বাহিরের কোন জেলা বা বিভাগীয় শহরে বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া ন্যায্য মূল্য পেলে ভবিষ্যতে এমন ষাঁড় লালন পালনে চেষ্টা করব। আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক ষাঁড় লালন পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পাবেন।
এ ষাঁড়ের বিষয়ে নকলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে এ দেশীয় জাতের ষাঁড়টি (বাংলার বাহাদুর) ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে দেশী ষাঁড়। এ দেশীয় জাতের ষাঁড়টিকে সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাইয়ে লালন পালন করা হয়েছে। দেশী জাতের এতবড় ষাঁড় সচারাচর নজরে পরেনা বলে তিনি জানান।