পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর জলে ভাসছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নিম্ন অঞ্চল গুলো । গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে সুমেশ্বরী নদীর পানি । বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও তিন-চার ঘণ্টা স্থায়ী থেকে আবারো কমতে শুরু করে নদীর পানি ।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নদীর পানি কমলেও স্বাভাবিক হলেও প্রভাব পরে আশপাশের নিম্ন অঞ্চলগুলোতে । উপজেলার গাঁওকান্দিয়া, বিরিশিরি, কাকৈরগড়া, চন্ডিগড়, বাকলজোড়া ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামে সোমেশ্বরীর ঢলের পানি রূপ নিয়েছে বন্যায় ।
এইসব অঞ্চলের রাস্তাঘাট ও নদীর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে । পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে আমনের ধানের বীজতলা ও মাছের ফিশারিও ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তথ্য মতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৫০ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে আর প্রায় ৭০ টি কৃষকের মাছের পুকুর ঢলের পানির তরে ভেসে গেছে । এই থেকে এসব কৃষকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ।
তবে উপজেলার সবচেয়ে করুন অবস্থা গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া, শ্রীপুর, বন্দ ঊষান, শংকরপুর, চন্ডিগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ সাতাশি, মধুয়াকোনা, নিলাখালী, চারি খাল, বনগ্রাম, বাকলজোড়া ইউনিয়নের মাদুর পাড়, ছোট কাঠুরিয়া, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণের চর লক্ষীপুর কালা মার্কেট সহ নিম্ন এলাকাগুলোর । এইসব এলাকা বাড়িঘর,ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ।
একদিকে করোনাভাইরাস অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভাবে এইসব এলাকার মানুষ গুলো পড়েছে চরম বিপাকে । যে যার মত করে নদীর পাড় ও বাপ দাদার রেখে যাওয়া ভীরা টুকু বাঁচাতে বাঁশ কাঠ দিয়ে ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মহীন উপজেলার অনেক মানুষ তার উপর নতুন এই দুর্যোগে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের চোখে-মুখে । মাঠ ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পশুখাদ্য সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের । এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বাড়িঘরে পানি বন্ধ অবস্থায় না খেয়ে মরতে হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা ।
সাতাশি গ্রামের আব্দুল হাকিম জানান, এই বছর আমার দুর্যোগের মধ্য দিয়েই যাইতাছি । কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাস এহন আবার নতুন করে বন্যা শুরু হইছে । আমরা তো দিন আইন্না দিন খাই । একদিন কাজ না করলে পরের দিন পেটে ভাত জুটে না । আমাদের হাঁস-মুরগি গরু ছাগল লইয়া আও পড়ছে এহন বিপদে । মাদকের সবকিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে যেদিকে যাই পানি আর পানি এখন আমরাই কই থাকমু আর পশু গুলারে কই রাখমু ।
এদিকে বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম । তিনি বলেন, বন্যায় বানভাসি মানুষদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় খাদ্যসহায়তা পৌঁছানো হয়েছে । আর গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের বেরিবাধ ভাঙ্গন মোকাবেলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ লাখ টাকার বদ্দা চলে আসছে । যেসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই এলাকা গুলো চিহ্নিত করে ফতু তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।