শনিবার চীনের গবেষকরা জানান যে, কোভিড-১৯ রোগীর রক্ত শর্করার মাত্রা উচ্চ হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটা হলো প্রথম গবেষণা যেখানে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন ডায়াবেটিস না থাকলেও রক্ত শর্করার উচ্চ মাত্রা কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই গবেষণার প্রতিবেদনটি ডায়াবেটোলজিয়াতে প্রকাশিত হয়।
গবেষকরা সকল হাসপাতালকে প্রত্যেক কোভিড-১৯ রোগীর রক্ত শর্করা চেক করতে পরামর্শ দিয়েছেন, যেন রেজাল্ট দেখে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমাতে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া যায়। যারা ঘরেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারাও যেন রক্ত শর্করার মাত্রা চেক করেন।
রক্ত শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন এনে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া যারা এখনো করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি তাদেরও রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত, কারণ ভাইরাস মহামারিতে কে কখন কিভাবে আক্রান্ত হবে বলা যায় না। এখানে রক্ত শর্করাকে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে রাখতে কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো।
মেডিটারেনিয়ান খাবার খান: ১৪০,০০০ মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মেডিটারেনিয়ান ডায়েট অনুসরণ করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ কম। মেডিটারেনিয়ান ডায়েটে উদ্ভিজ্জ খাবারের প্রাধান্য থাকে, যেমন- ফল ও শাকসবজি, শিমের বিচি ও অন্যান্য বিনস, বাদাম, গোটা শস্য ও অলিভ অয়েল। মাছ ও মুরগির মাংস নিয়মিত খাওয়া হলেও লাল মাংস, মাখন ও মিষ্টি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা হয়। উদ্ভিজ্জ খাবারের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও ফাইবার রক্ত শর্করাকে স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে ও অলিভ অয়েল প্রদাহ কমিয়ে থাকে।
খাদ্যতালিকায় নীল রঙের খাবার রাখুন: বেশি করে অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই পুষ্টির কারণে আঙুর ও বেরি উজ্জ্বল লাল ও নীল রঙ পেয়ে থাকে। সম্প্রতি একটি বৃটিশ গবেষণায় অ্যান্থোসায়ানিন ও রক্ত শর্করার স্বাস্থ্যকর মাত্রার মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া গেছে। ‘প্রতিদিন আধ বাটি আঙুর বা বেরি খেলে রক্ত শর্করার ওপর ততটুকু ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যতটুকু প্রভাব পড়ে এক পয়েন্ট বডি মাস ইনডেক্স কমলে।’ বলেন, নরউইচ মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক আইদিন ক্যাসিদি।
সকালের খাবার খান: যারা সকালের খাবার এড়িয়ে যান তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সকালে খাবার খেলে সারাদিন রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সকালের খাবারে প্রোটিন, জটিল কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের স্বাস্থ্যকর সমন্বয় থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সকালে দইয়ের সঙ্গে ফল ও বাদাম খেতে পারেন।
ঘাম ঝরান: যারা শরীর থেকে নিয়মিত ঘাম ঝরিয়ে থাকেন, অর্থাৎ ব্যায়াম করেন তাদের ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা কার্ডিও ও কমপক্ষে এক ঘণ্টা স্ট্রেংথ ট্রেইনিং করেছেন তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার কম ছিল। ব্যায়াম করলে শরীরের পেশীগুলো রক্তপ্রবাহ থেকে বেশি করে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে। সময় পরিক্রমায় একজন মানুষ যত বেশি ফিট হন, কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি তত বেশি সংবেদনশীল হয়।
হেঁটে আসুন: যারা ডেস্কে কাজ করেন তারা যেন প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২ মিনিট আশপাশে হাঁটাহাঁটি করেন। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি উপরের দিকে ওঠে। ইংল্যান্ডের একটি নতুন গবেষণা ইঙ্গিত করছে যে, বসে করতে হয় এমন কাজে নিয়মিত হাঁটার বিরতি নিলে রক্ত শর্করা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় থাকে ও খাবার খাওয়ার পর রক্ত শর্করার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিরোধ হয়।
ওষুধ চেক করুন: কিছু পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যার ওষুধ রক্ত শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, যেমন- হাঁপানির ওষুধ স্টেরয়েড, কোলেস্টেরলের ওষুধ স্টাটিন ও রক্তচাপের ওষুধ ডিউরেটিক। এসব স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে হবে যে রক্ত শর্করার মাত্রার ওপর প্রভাব না ফেলেই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনে এমন কোনো ওষুধ আছে কিনা। এছাড়া মাঝেমধ্যে ঘরে ব্লাড সুগার মিটার দিয়ে রক্ত শর্করার মাত্রা চেক করে দেখা ভালো।