এক সময় বলা হতো ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নেই রক্ষা’। শত বছর আগেও পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ টিউবারকিউলোসিস (টিবি) অর্থাৎ যক্ষ্মায় মারা যেত। ১৯২১ সালে যক্ষ্মার ভ্যাকসিন (বিসিজি ) ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে এই রোগে মৃতের হার কমতে থাকে।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, এই বিসিজি টিকা বর্তমানের কোভিড-১৯ রোগ সারাতেও কার্যকর হতে পারে। যেসব দেশে ব্যাসিলাস কালমেটে গুয়েরিন (বিসিজি ) টিকা দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে, সেসব দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গবেষকরা দেখেছেন এই ভ্যাকসিনের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের কম হারের একটা স্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। যেসব দেশে এই ভ্যাকসিন বেশি সমাদৃত হয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে অন্য দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও কোভিড-১৯ রোগে মারা যাওয়ার বিষয়টা তুলনা করেছেন গবেষকরা।
বিভিন্ন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার বিবেচনায়, বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যেসব দেশে ১০ শতাংশ বেশি বিসিজি টিকা দেয়া হয়েছে, সেখানে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের হারও ১০.৪ শতাংশ কম দেখা গেছে। আমেরিকার ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের গবেষকরা যৌথভাবে এই গবেষণায় অংশ নেন। তাদের গবেষণাটি ছাপা হয় পিএনএএস জার্নালে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিসিজি ভ্যাকসিনের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যাটা জড়িত। বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় এনে এই গবেষণায় বিসিজি ভ্যাকসিন দেয়াদের মাঝে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের হার কম দেখা গেছে। বিসিজি টিকা শুধু যক্ষ্মাই প্রতিরোধ করে না, এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অন্য সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে।
আমেরিকানদের মাঝে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া হয়েছিল, ৬০ বছর পরও তারা যক্ষ্মা থেকে নিরাপদে ছিল। বিসিজি শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত অসুখ থেকেও মানুষকে রক্ষা করতে পারে বলে জানা গেছে। প্রায় ১০০ বছর যাবত এই টিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুদের দেয়া হলেও টিকাটি কেমন উপকারি, তা নিয়ে অনেকটা রহস্যই রয়ে গেছে। আর এখন কীভাবে এই টিকা মরণব্যাধি কোভিড-১৯ রোগ পরাজিত করতে ভূমিকা রাখছে, তা বেশ বড় এক রহস্যই বলতে হয়। কারণ কোভিড-১৯ রোগের কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
এক্ষেত্রে গবেষকরা বলছেন টিকাতে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া মাইকোব্যাকটেরিয়াম ব্যবহার করা হয় বলে, সেটি শরীরের রোগ প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এ নিয়ে নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণা চলছে। তবে এরই মাঝে গবেষকরা বলছেন বিসিজি ভ্যাকসিন বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষ, যেমন- স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ সদস্যদের জন্য ইতিবাচক ভূমকা রাখবে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া হয়। আমাদের বাংলাদেশেও শিশুদের এই টিকা দেয়াকে বাধ্যতামূলক করা হয় অনেক আগে থেকেই। তাই উন্নত বিশ্বে যেখানে কোভিড-১৯ রোগে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার খবর জেনেছি আমরা, সেখানে আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনের মতো মারা যাচ্ছে বলেই সরকারি হিসেবে জানা যায়। এটি কি বিসিজি টিকার সুফল কি না, তা নিয়ে আরেকটি গবেষণা করতেই পারেন আমাদের দেশের গবেষকরা।