ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের দুঃসহ স্মৃতি মূলত একটাই। তা হচ্ছে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরা। সৌরভ গাঙ্গুলী প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে খেলেছিলেন কবে? তাঁকে প্রথম আউট করেছিলেন কোন বাংলাদেশি বোলার? এ প্রশ্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আসতেই পারে! ক্যারিয়ারে প্রতিটি ম্যাচে কোন কোন বোলারের কাছে ধরাশায়ী হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তার হিসাব ভুলে যেতে চান ব্যাটসম্যান। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকের তিন বছর আগে, ১৯৮৯ সালে এশীয় যুব ক্রিকেটে খেলতে প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন সৌরভ। বাংলাদেশের কোনো দলের বিপক্ষে প্রথম খেলেছিলেন ময়মনসিংহে। তাঁকে প্রথম ফিরিয়েছিলেন সেলিম শাহেদ।
এশীয় যুব ক্রিকেটে সেবার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ ছাড়াও খেলেছিল মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের যুব দলে খেলা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারই পরবর্তী সময়ে নিজ দেশের বড় তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এঁদের মধ্যে আছেন মঈন খান, বিনোদ কাম্বলী, অজয় জাদেজা, মারভান আতাপাত্তু, কুমার ধর্মসেনা, হাবিবুল বাশার, আমিনুল ইসলাম, জাভেদ ওমরের মতো খেলোয়াড়েরা। সৌরভ সেবার বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের বিপক্ষে ময়মনসিংহে যে ম্যাচটি খেলেছিলেন তাতে তিনি আউট হয়েছিলেন ৩৩ রানে। সেলিম শাহেদের অফ স্পিনে তিনি স্টাম্পড হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলমের হাতে। জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেলেও সেলিম শাহেদ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে থাকলেও তাঁকে বাদ দিয়ে শেষ মুহূর্তে মিনহাজুল আবেদীনকে দলভুক্ত করা হয়েছিল।
এশীয় যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৩ রানই সৌরভের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি খুব ভালো করতে পারেননি।সে টুর্নামেন্টে অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতই।
বাংলাদেশের মাটিতে সৌরভের প্রথম সেঞ্চুরি তাঁর ওয়ানডে অভিষেকের বছরেই। ১৯৯২ সালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট দল বিসিসিবি (বর্তমানে বিসিবি) একাদশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলতে ঢাকা এসেছিল। বিসিসিব একাদশের মোড়কে দলটি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলই। সেই সফরেই সৌরভ নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখে যান ঢাকায়। দুটি ম্যাচের একটিতে সেঞ্চুরি ও অন্যটিতে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
সৌরভের ওয়ানডে অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ব্রিসবেনে। সে ম্যাচে ৩ রানে আউট হওয়ার পর টানা চার বছর তিনি ভারতীয় দলে আর সুযোগ পাননি। ১৯৯৬ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফনরে লর্ডসে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। সেঞ্চুরি করেন নিজের দ্বিতীয় টেস্টেও। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে। অধিনায়ক হয়েছেন। অধিনায়কত্বেও সাফল্য পেয়েছেন। পরিণত হয়েছেন ভারতের সফল এক অধিনায়কে। ভারতীয় ক্রিকেটের দিন বদলের নায়কই বলা হয়ে তাঁকে।
সৌরভ বাংলাদেশর বিপক্ষে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচটি খেলেছিলেন ১৯৯৭ সালে, কলম্বোর এশিয়া কাপে। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে সৌরভকে ফেরাতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলারই। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৭৩ রান করে। ভারতের সহজ জয়ের ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন সৌরভই।
ওয়ানডেতে সৌরভকে প্রথম ফিরিয়েছেন কোন বাংলাদেশি বোলার? ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে সৌরভ বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ রানে আউট হয়েছিলেন। পেসার শফিউদ্দিন আহমেদের বলে তিনি উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছিলেন খালেদ মাসুদের হাতে। টেস্টে সৌরভকে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে আউট করেছিলেন নাঈমুর রহমান। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সৌরভ খেলেছিলেন ৮৫ রানের ইনিংস। তিনি নাঈমুরের বলে আল শাহরিয়ারের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌরভে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ২০০০ সালের ৩০ মে। বাংলাদেশের ২৪৯ রানের জবাবে ভারত সে ম্যাচটা জিতেছিল ৯ উইকেটে। সৌরভের অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসটি সে ম্যাচে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়।
এবার একটা মজার তথ্য। সৌরভ বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন কবে, কোন বোলার আউট করেছিলেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে যেতে হবে ১৬ বছর আগে। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে সৌরভ মাত্র ২ বল খেলে শূন্য রানে ফেরেন। তাঁকে বোল্ড করেছিলেন পেসার তাপস বৈশ্য।
টেস্টে সৌরভের একটি সেঞ্চুরি আছে বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০০৭ সালে। চট্টগ্রামে তিনি করেছিলেন ঠিক ১০০ রান। নিজের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ও বিপক্ষে ওয়ানডে খেলেছেন ১০টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছেন ৫টি।
ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়কের টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে মোট রান ১৮ হাজার ৫৭৫। খেলেছেন ১১৩টি টেস্ট, ৩১১টি ওয়ানডে। বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার সেলিম শাহেদ কিংবা তাপস বৈশ্যকে মনে রাখার কথা নয় সৌরভের। শাহেদ কিংবা তাপসেরই কি মনে থাকার কথা সৌরভকে নিয়ে এ দুটি ঘটনা!