করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ তিন মাস ধরে বন্ধ আছে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ থাকতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হওয়া নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ‘অটোমেটিক পাস’ করে দেওয়ার চিন্তা করছে শিক্ষা প্রশাসন। তবে শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন, মেধা মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাস করানো হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘অটো পাস সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে রাখা যেতে পারে। তবে সে সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া উচিত হবে না। এর জন্য আরো সময় প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আরো কিছু দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ, আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে তো একটি বছর নষ্ট করে দেওয়া যায় না। তবে যেটাই করা হোক, এর একটি ভিত্তি থাকতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমেও বর্তমানে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে। সেখানে তাদের ক্লাস টেস্ট নিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।’
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. একরামুল কবির বলেন, ‘অটো পাস বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের বেসিক মূল্যায়নের একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান সেশনকে দুই মাসের জন্য পিছিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সিলেবাস ছোট করা যেতে পারে। তবে নিচের শ্রেণিগুলোতে অটো পাস দেওয়া যেতে পারে। কারণ, তাদের সামনে যে বড় ধাক্কা এসএসসি, সেটার আগে তারা নিজেদেরকে তৈরি করে নিতে পারবে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, ‘পরীক্ষাটা গৌণ, পড়ালেখাটাই মুখ্য। তাই করোনাকালেও শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার দিকেই মনোযোগী থাকা দরকার। তবে শিক্ষার্থীরা শিখল কি না, না শিখতে পারলে তাকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের আগ্রহী হতে হবে। বর্তমান অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষা কিংবা বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ পড়বে। তা না করে বরং প্রতিটা ক্লাসে শিক্ষার্থী কতটুকু শিখছে বা কতটা ঘাটতি আছে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু এগুলো পাবলিক পরীক্ষা নয়, সেহেতু ভিন্নভাবেও তাদের যাচাই করা যায়। পৃথক মানদণ্ডেও তাদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে পরবর্তী ক্লাসের জন্য।’