করোনার কারণে থমকে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া। এই হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ৯ মাস পার হলেও মামলার বিচারকাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে, সহসা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাকি না হলে ভার্চুয়াল কোর্টেই বিচার শুরুর আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
ইতোমধ্যে গত ২ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (পিপি/জিপি) মো. আব্দুস সালাম মণ্ডল এই মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে চিঠি ইস্যু করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, আবরার হত্যা মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজলকে চিফ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং অ্যাডভোকেট এহেসানুল হক সমাজী ও অ্যাডভোকেট মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়াকে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে।
বিচার শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন সব কিছু থেমে থাকবে না। কোরবানির ঈদের পরও যদি করোনার সংক্রমণ থেকে যায়, তবে ভার্চুয়াল কোর্টেই বিচার শুরু হতে পারে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’
মোশাররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, ‘সরকার এরই মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারের আইনও করে ফেলেছে। তাই এখন আসামিদের কারাগারে রেখেই বিচার শুরুর আইনগত কোনো বাধা নেই।’
ছেলে হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরার হত্যার বিচার মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই। ৯ মাস পার হয়ে গেছে। এখন যদি বিচার শুরুর সুযোগ থাকে, তবে তাড়াতাড়ি হোক।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
আসামিরা হলো—ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে প্রথম ২২ জন কারাগারে ও তিনজন পলাতক। বাকি আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।