‘নামে কী বা আসে যায়’—এই উক্তি যে সর্বৈব সত্য নয়, প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ দিচ্ছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামের বাসিন্দারা।
শুধু একটি নামের কারণে তাদের জীবন রীতিমতো নরক হয়ে গেছে৷ প্রতিনিয়ত তারা শিকার হচ্ছেন সামাজিক বৈষম্যের। আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ তাদের সঙ্গে মিশে না, শহরে তাদের কাজ বন্ধ, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনেরাও। কারণ এই গ্রামের নাম করোনা।
দেশটির উত্তর প্রদেশের লখনৌ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে সীতাপুর জেলায় এ গ্রামের অবস্থান। নিরিবিলি পরিবেশের এই গ্রাম চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেকটা অশান্ত হয়ে উঠেছে। গ্রামের নাম করোনা হওয়ায় বাইরের লোকদের কাছে হঠাৎ বিদ্রূপের বিষয় হয়ে উঠেছেন এখানকার বাসিন্দারা।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দেখলেই লোকজন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম ওরিশা পোস্টকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন করোনা গ্রামের রাজন নামে এক বাসিন্দা। তিনি বলেন—কেউ আমাদের সঙ্গে মিশতেই রাজি নয়। যখন কাউকে বলি, আমরা করোনা গ্রামের তখনই মানুষজন আমাদের এড়িয়ে চলে যান। তারা কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না যে এটা আসলে একটি গ্রামের নাম। এখানে কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নই কিংবা করোনা রোগের জন্য আমরা দায়ীও নই।
এত গেল সাধারণ মানুষের অনুভূতি। প্রশাসনের কাছ থেকেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন এখানকার মানুষ। তারা রাস্তায় বের হলে, পুলিশি জিজ্ঞাসায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যখন তারা বলছেন, করোনা যাচ্ছেন তখন পুলিশও বিচলিত হয়ে পড়ছেন।
রামজি দীক্ষিত নামে এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা গণমাধ্যমকে যা জানিয়েছেন তা আরো বিব্রতকর। তিনি বলেন—আমরা যখন লোকজনকে প্রয়োজনে মোবাইল করি এবং তাদের বলি যে করোনা থেকে বলছি, তারা তখনই আমাদের কল কেটে দেয়, তারা ভাবে যে, কেউ তাদের সঙ্গে রসিকতা করছে।
এছাড়া এই গ্রামের যে সকল বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল তাও ভেঙে গেছে। এতে রীতিমতো অসহায় অবস্থায় আছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তারা এই নরক থেকে মুক্তি চান। তাই সবাই মিলে ঠিক করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে গ্রামের নাম বদলানোর আবেদন করবেন। এখন দেখার বিষয় জেলা প্রশাসক কি সিদ্ধান্ত নেন।