করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় টিউশন ফি আদায়ে চাপ না দেওয়ার জন্য ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। তারা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফিয়ের উপর নির্ভর করে। যদি টিউশন ফি আদায় করতে না পারেন, তাহলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেবেন? টিউশন ফি আদায়ের বিকল্প দেখছেন না তারা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলছে, ফি আদায়ে চাপ দিলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্দেশের পরও চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায়ের বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আবুল মনছুর ভুইয়া বলেন, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় করা যাবে না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য এই টিউশন ফি নিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। তবে কোনো অভিভাবকের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক হারুনুর রশিদ জানান, যেখানে সরকার থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে, সেখানে প্রতিষ্ঠান খুলে নানাভাবে টিউশন ফি দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। ই-মেইল করে বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘‘এ পরিস্থিতিতে এমন করা প্রতিষ্ঠানের একদমই উচিত হচ্ছে না। কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের ফি দিতে হচ্ছে।’’
ডিপিএস এসটিএস স্কুলের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে অনেকে পরিবারের খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ মূহুর্তে দেশের সকল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৫০ শতাংশ ফি মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে কর্মহীন। এমনও আছে, অনেক শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেন না। তবে এ মূহুর্তে টিউশন ফির জন্য চাপ দেওয়া সত্যিই অমানবিক।
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্নখাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। সেই প্রণোদনা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দিতে হবে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন উপকৃত হবে, তেমনি অভিভাবকরাও উপকৃত হবেন।
রাজধানীর আগা খান স্কুলের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানে আসতে বলিনি। আমাদের নির্দেশনা হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা অনলাইনে টিউশন ফি পরিশোধ করতে হবে।’’ তবে এক্ষেত্রে কাউকে চাপ দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
ডিপিএস এসটিএস স্কুলের অধ্যক্ষ হর্ষ ওয়াল বলেন, তার স্কুলে বকেয়া টিউশন ফি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে টিউশন ফি বাড়ানো হবে না। বার্ষিক টিউশন ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে চারটি কিস্তি বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে।
শেলের টেক ইংলিশ ভার্সন স্কুলের অধ্যক্ষ আঞ্জুমান লায়লা বলেন, ‘‘আমরা টিউশন ফি দেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিভাবককে চাপ দেইনি। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতে টিউশন ফি দিতে বলা হয়েছে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যদি ফি দেন; তাহলে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’’
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জি এম নিজামুদ্দিন বলেন, মূলত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হয় এ সব টিউশন ফি থেকেই। সেই জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। তবে এক্ষেত্রে চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।