নারায়ণগঞ্জের করোনা ফাইটার কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিনামূল্যে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মাঝে প্লাজমা ও অক্সিজেন বিতরণ করছেন। তিনিই সারা দেশের মধ্যে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে এ সেবামূলক কাজটি শুরু করেছেন। এছাড়া তার রয়েছে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা। এর আগে মৃত ব্যক্তিদের দাফন করে তিনি দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন।
বেসরকারিভাবে খোরশেদের উদ্যোগে করোনায় ও করোনার উপসর্গে মৃতদের দাফনের পাশাপাশি আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে টেলিমেডিসিন, প্লাজমা ও অক্সিজেন সরবরাহ কাজ করায় অনেকে সুফল পাচ্ছেন। বিনামূল্যে তার সংগৃহীত প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন করোনা আক্রান্তরা। শুধু তা-ই নয়, শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের বাড়িতেও অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন তিনি। তবে এর পুরোটাই তিনি করছেন ‘টাইম টু গিভ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় একেবারে বিনামূল্যে।
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনি ও তার টিম মোট ১০৫৪৯ জনকে টেলিমেডিসিন সেবা, ৪৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীনকে প্লাজমা দিয়েছেন, ২৩ জনকে অক্সিজেন সেবা সরবরাহ করেছেন এবং করোনায় ও করোনার উপসর্গে মারা যাওয়া ৯৩ ব্যক্তির দাফন ও সৎকার করেছেন।
এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন দক্ষ টিম মেম্বাররা। তারা অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, আইসোলেশনে থেকেছেন এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে আবারো টিমে যোগ দিয়েছেন। এখনো তার দাফন টিম মেম্বার আনোয়ার হোসেন আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন। প্লাজমাগুলো তারা সংগ্রহ করছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে। সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের বিনামূল্যে পৌছে দিচ্ছেন তারা। অক্সিজেন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে পাঁচটি সিলিন্ডার ও তিনটি অত্যাধুনিক অক্সিজেন মেশিন, যা কিনা বাতাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন জেনারেট করে রোগীকে সরবরাহ করতে সক্ষম।
ইতোমধ্যে ২১ জন প্লাজমা সেবায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে গুরুতর পাঁচ আক্রান্ত রোগী প্লাজমা সেবা নিয়েও মারা গেছেন। অক্সিজেন সেবা নিয়ে বেশিরভাগ আক্রান্ত এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন।
প্লাজমা সেবা নেয়া মোক্তার হোসেনসহ বাড়ি ফেরা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে গেলে তারা খোরশেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং তার এ ঋণ কোনোদিনও পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানান। তারা তার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
রাজধানীর আজিমপুর নিবাসী নজরুল ইসলাম জানান, তার ছেলে রবিন করোনা আক্রান্ত হয়ে ইবনে সিনা হাসপতালের আইসিউতে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকরা ছেলেকে প্লাজমা দেয়ার কথা বললে আমি শতশত মানুষকে ফোন করে ব্যার্থ হয়ে একজনের পরামর্শে টিম খোরশেদকে ফোন করলে দুই ঘণ্টার মধ্যে তারা বিনামূল্যে আমার ছেলেকে ৪০০ এমএল প্লাজমা ডোনেট করে। আল্লাহর রহমতে ছেলে এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। নজরুল ইসলাম আবেগ প্রবণ হয়ে বলেন টিম খোরশেদ যেন আমার কাছে আল্লাহর ফেরেশতা হয়ে হাজির হয়েছিল।
টিম খোরশেদের টেলিমেডিসিনে রয়েছে ১০ জন চিকিৎসক। তারা ১৩ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত ১০৫৪৯ জনকে সেবা দিয়েছেন।
ডা. ফারজানা ইয়াসসিন জানান, যতদিন প্রয়োজন তারা সেবা অব্যাহত রাখবেন। প্লাজমা সংগ্রহ ও ডোনেশনের দায়িত্বে রয়েছেন খন্দকার নাঈমুল আলম, আরাফাত নয়ন, রিজন, সাইফি, শাহেদ। অক্সিজেন সেবার দায়িত্বে আছেন এসকে জামান।
কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ শনিবার দুপুরে নয়াদিগন্তকে জানান, আমি আল্লাহকে খুশি করতে এসব করছি, কোনো কিছু পেতে বা কোনো কিছুর আশায় নয়। যতদিন শ্বাস থাকবে ততদিন আমি আমার কাজ অব্যাহত রাখবো। প্লাজমা সংগ্রহ ও প্রদান আমরাই দেশের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে শুরু করেছি। অক্সিজেন সেবায়ও আমরা প্রথম। পরবর্তীতে আমাদের দেখে মানুষ উৎসাহিত হয়েছে এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এতে এগিয়ে এসেছে। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে আমাদের কাজটি আরো সহজ হবে এবং আমরা আরো ভালোভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পারবো। দাফন সৎকারেও আমরা প্রথমে এগিয়ে এসে সবাইকে সাহস যোগাতে চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও আমরা এভাবেই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।