এ গল্পটি এক মেষপালককে নিয়ে। তবে এতে আরো কয়েকটি চরিত্র আছে। গল্পে আছেন একজন ভূগোল শিক্ষক এবং পেনশনের টাকায় নিজের খরচা চালানো আরেকজন বৃদ্ধের।
গল্পটি দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশের ক্ষেমেগা গ্রামের। সেখানেই বাস এই মেষপালকের। যার নাম ডুমাঙ্গে তৈয়বেকা। যিনি হঠাৎই নায়ক বনে গেছেন।
কীভাবে?
ডাইনোসরের সমাধি আবিষ্কার করে। তিনি দুই শ’ মিলিয়ন বা দুই হাজার বছরের পুরনো ডাইনোসরের কঙ্কালের সন্ধান দিয়েছেন। সেই থেকে লোকালয়ে রীতিমতো ‘নায়ক’ বনে গেছেন ৫৪ বছর বয়সী তৈয়বেকা।
তার মুখেই শোনা যাক সেই সমাধি খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটা।
“আমার বংশের পূর্ব পুরুষ অর্থাৎ আমার দাদা’র বাবা ও মায়ের সমাধি ছিল এখানে। আর আমার ওপরে ছিল সেগুলো দেখ-ভাল করার দায়িত্ব।”
একদিন সমাধি রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ করার সময় হঠাৎ নজরে এলো বিরাটকার একটা হাড়। ”এরকম হাড় আমি জীবনের দেখিনি।”
“শৈশবে আমরা ডাইনোসরের গল্প শুনেছি। কিন্তু তখন আমরা জানতাম যে, ডাইনোসরের গল্প হচ্ছে এক ধরনের রূপকথা,” বলছিলেন জেমস রেলেন।
“তবে ১৯৮২ সালে কিছু বই পড়ার পর আমার মনে হলো, ডাইনোসর আসলে কল্পকাহিনী নয়, এটি বাস্তব। সেই থেকেই ডাইনোসরের অস্তিত্বের সন্ধান করেছি আমি,” জানাচ্ছিলেন জেমস রেলেন।
রেলেন হলেন এই গল্পের দ্বিতীয় চরিত্র এবং পেনশনের টাকার উপরেই যার জীবিকা নির্ভরশীল।
রেলেন বলছিলেন যে, “এই আবিষ্কারের অংশ হতে পেরে আমার যে কী আনন্দ হয়েছে তা আর বলে বোঝানো যাবে না।”
“এই ক্ষুদ্র গ্রাম নিয়ে একদিন বই লেখা হবে। আর সারা দুনিয়া তখন জানবে আমাদের কথা।”
এমনকি এখানকার স্থানীয় উন্নয়নেও এটি বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন জেমস রেলেন।
ডাইনোসরের ফসিল বা জীবাশ্ম খুঁজে বের করা এই তিনজনের আরেকজন হলেন থেম্বা জিকাজিকা। তিনি পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূগোল শিক্ষক।
জিকাজিকা বলছিলেন, “কঙ্কালটা পেয়ে তারা সেটি আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন সেটিকে আমি জানাই যে, এটি একটি ফসিল।”
সবখানে ছড়ানো ছিল ডাইনোসর
২০১৮ এর শুরুর দিকে এই গ্রামে এক দল প্রত্ম-জীবাশ্মবিদ কয়েক সপ্তাহ ধরে ডাইনোসরের সমাধিতে খনন কাজে অংশ নিয়েছে।
এই দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক জোনাহ কোইনিয়ের।
তিনি বলছিলেন, “আমরা যখন প্রথম ওই জায়গাটা দেখতে যাই, সেটি ছিল দারুণ ব্যাপার। মনে হচ্ছিলো সবখানেই ছড়ানো ছিল ডাইনোসর।”
সামনের বছর আবার তারা এই গ্রামে আসবেন এবং এই কঙ্কাল ও হাড়গুলোকে জোহানসবার্গে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান তিনি।
বারো জাতের উদ্ভিদ-খেকো প্রজাতি
যেখানে এই কঙ্কাল মিলেছে সেই জায়গাটি একেবারে পতিত ভূমি। কোনো গাছপালা কিছুই নেই সেখানকার প্রায় ১২ মাইলের মধ্যে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, শতশত প্রত্ন-জীবাশ্ম সেখানে রয়েছে। আর এগুলো এসেছে অন্তত ১২ জাতের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ-খেকো সরোপোডোমর্ফ ডাইনোসর থেকে।
যে হাড়টা পাওয়া গেছে তা দেখে অনুমান করা হচ্ছে যে, প্রাণীটি কমপক্ষে ২৬ ফিট লম্বা আর এক টন ওজন ছিল।
আজ থেকে প্রায় ১,৪৫০ বছর থেকে ২,০০০ বছর আগে জুরাসিক যুগে লম্বা গলার, দীর্ঘ শরীরের এই ডাইনোসরগুলো পাওয়া যেতো।
গবেষণায় এই জায়গা থেকে আরো দারুণ তথ্য আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, গবেষণা সম্পন্ন করতে হয়তো সময় লাগতে পারে বছরের পর বছর।
কিন্তু ইতোমধ্যেই এই প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত নবীন গবেষক চেবিসা ম্ডেকাজি।
পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু
নদীর শুকনো রেখা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিনজন স্থানীয় পুরুষ বলছিল, এই জায়গাটিকে ঘিরে তাদের বিরাট স্বপ্নের কথা।
তারা চায়, এই স্থানটিকে ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যদি তা করা হয় তাহলে গবেষক ও পর্যটকেরা এখানে আসবে।
এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতি।
আর মেষপালক তৈয়বেকা মনে করেন, এই স্থান এখানকার তরুণ প্রজন্মের জীবনটাই পাল্টে দিতে পারে।
তিনি বলছিলেন, “আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু এই ডাইনোসরগুলো পাওয়ায় আমাদের সন্তানেরা বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ায় আগ্রহী হবে।”