একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন আসনে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা নিয়ে রিটের শুনানিতে তৃতীয় বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে করা আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের লিখিত আবেদনের বিষয়ে অবগত করার পর আদালত এই দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে সোমবার খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এএইচএম কামরুজ্জামান মামুন, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনজানান, মঙ্গলবার আমরা আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করে সময় চাই। পরে আদালত প্রথমে আজ বেলা ২ টায় ও পরে (২টার পর) আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির জন্য ঠিক করেন। তিনি বলেন, এভিডেবিট কমিশনাররা সোমবার মিটিংয়ে ছিলেন। এজন্য আমরা এভিডেবিট করতে পারেনি। আদালতে এটা উল্লেখ করে আগামীকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি চেয়েছি। আদালত অনাস্থা আবেদনটা মঙ্গলবার সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করেছেন।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর মৌখিকভাবে এ আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চে শুনানি করতে না চাইলে, আজ খালেদার আইনজীবীরা এ বিষয়টি উপস্থাপন করার পর এভিডেবিট (হলফনামা) আকারে অনাস্থার বিষয়েটি লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করবেন।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার রিটের বিভক্ত আদেশটি সমাধানের জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ফেনী ১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পরের দিন ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এই রিটের শুনানি শেষে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন।
১১ ডিসেম্বর বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের আদেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির তা নাকচ করেন।আদালতে ওই দিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।
হাইকোর্টের দেয়া ওই বিভক্ত আদেশের কপি এবং সংশ্লিষ্ট নথি ওই দিন (১১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু আদেশের কপি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে পরের দিন ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তা ফেরত পাঠানো হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ কপি পাঠানো পর প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।
মামলার সসকল নথি বুধবার বিকেলেই (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নির্ধারিত করে দেয়া একক বেঞ্চে পাঠানো হয়। পরে (১৩ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন বেঞ্চ। দুপুর দু’টায় ওই বেঞ্চে শুনানি হয়। শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, এ আদালতের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তিনি আজ শুনানি না করার অনুরোধ জানান। এরপরই বিচারিক শুনানি আজ (১৭ ডিসেম্বর) সোমবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।’
বিচারপতির প্রতি অনাস্থার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা আগের গ্রাউন্ডেই এই অনাস্থার বিষয়ে অটল রয়েছি। আমরা বলেছি আমাদের এই আদালতের প্রতি আস্থা নেই, কারণ- সৈয়দ রেফাত আহমেদ ছিলেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি।
তিনি জানান, সুপ্রিমকোর্টের বিধান হলো : একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যদি কোনো মামলার শুনানি করেন তবে জুনিয়র কোনো বিচারপতি ওই মামলায় আর শুনানি করতে পারবেন না। সেই জন্য এই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানানো হয়েছে।
খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিন আসনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর বিরুদ্ধে করা আপিলও গত ৮ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে ইসি। পরে ইসির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক তিনটি রিট করেন খালেদা জিয়া।