জামালপুরে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

যমুনাপাড়ের ৪ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৫৩টি গ্রামের নিন্মাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

জামালপুরে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে নতুন নতুন এলাকা।

রোববার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপরে ছিল বলে জানান জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান ।

পানির তীব্র স্রোতে গুঠাইল বাজারের কাছে রাস্তা ভেঙে ইসলামপুর-গুঠাইল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও উলিয়া-বলিয়াদহ সড়কে ৫টি স্থানে সড়ক ভেঙে হু হু করে লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। নতুন নতুন এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ।

ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়ার ৪৮ বছরের বয়সি আবুল কালাম জানান, আগে উঠানে পানি ছিল, এখন ঘরে হাঁটু পানি। পানির তীব্রস্রোতে ঘরে টিকতে না পেরে মেলান্দহের দুরমুঠে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি আশ্রয় নিতে।

একই উপজেলার উলিয়ার ৫৫ বছর বয়সি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বাবা এইবার পানির তেজ খুব বেশী। সন্ধায় বাড়ির সামনে পানি আছিল, শেষ আইতে দেহি ঘরে ঢুইক্যা পড়ছে, সহালে দেহি পানি এমন ধাক্কা দিতাছে যহন তহন ঘর পইরা যাবার পারে, তাই টুফলা টাফলি বউ বাচ্চা নিয়ে পানি তন উইঠ্যা আইলাম। কই আশ্রয় পামু জানিনা।’

চিনাডুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, চিনাডুলি ইউনিয়নে নিন্মাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। এসব এলাকার ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও পৌর এলাকা, চিকাজানি, চুকাইবাড়ি, ডাংধরা ও বাহাদুরাবাদ, সরিষাবাড়ীর পিংনা, পোগলদীঘা, আওনা, কামারাবাদ ও সাতপোয়া ও বকশীগঞ্জে মেরুরচর ও সাধুর পাড়া ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানিয়েছেন, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ২০ মেট্রিকটন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ ও পুর্ণবাসন অধিদপ্তরে ৩৫০ মেট্রিকটন চাল,নগদ ৭লাখ টাকা ও ২হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, জেলার ৪৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা নেওয়ার জন্য ইঞ্জিন চালিত ১২টি নৌকা রাখা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, জেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১৫৭৫ হেক্টর জমির পাট, ১৩০ হেক্টর আউশ ধান, ১৭৭ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর বীজতলা ও ২ হেক্টর জমির বাদাম।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ জানিয়েছেন, পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। আরো ২/১দিন একই গতিতে পানি বাড়বে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

Share this post

scroll to top