টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির কুড়ি বছরে পা বাংলাদেশের

১০ নভেম্বর ২০০০, বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। এদিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। শুরু হয় নতুন এক পথচলার। তবে এই টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পেছনের গল্প এখনকার তরুণদের ক’জনই বা জানে?

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য প্রথম আবেদন করে ১৯৯৬ সালে। যখন টেস্ট খেলার মর্যাদার জন্য আবেদন করে, তখন সেটি প্রাপ্তির সম্ভাবনা ছিল শূন্যের কৌঠায়। কারণ দল হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট তখনও হাঁটি হাঁটি পা পা অবস্থায়।

তবে দৃশ্যপট বদলায় ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর। তখনকার আইসিসির কনফারেন্সে ৯টি পূর্ণ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা দেওয়ার জন্য সমর্থন দেয় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে। তবে ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিরোধিতা করে বসে।

আর তাই অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত সব দেশের সমর্থন মেলার পর ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ পায় টেস্ট স্ট্যাটাসের মর্যাদা। আজ টেস্ট স্ট্যাটাসের মর্যাদা পাওয়ার অর্থাৎ আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভের ২০ বছর পূর্ণ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের।

কুড়ি বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের পথচলা এখনও সুমধুর হয়নি। বন্ধুর পথে এখনও ধুঁকছে বাংলাদেশ। সময়ের পথ চলায় এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ১১৯টি টেস্টে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় কেবল ১৪টি, ড্র ১৬ এবং পরাজয়ের গ্লানি আছে ৮৯ ম্যাচে। বাংলাদেশের ১৪ জয়ের সর্বোচ্চ ৭টি এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ৪টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় আছে ১টি করে। এরমধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে চট্টগাম টেস্ট জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। সেবারই প্রথম সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ। আর দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয় আসে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের মাঠে। বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্টেও জয় পায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

গত ২০ বছরে টেস্টের দল ১০টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। নতুন সংযোজন আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলা কেবল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলেনি। নতুবা মাঠে নামা হয়েছে বাকি সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের টেস্ট খেলা শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি ২০টি টেস্ট খেলেছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের স্কোর বাংলাদেশের। ২০১৩ সালে গলে বাংলাদেশ করেছিল ৬৩৮ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বন্ধু দেশ জিম্বাবুয়ের, ১৭টি। এছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬টি, নিউজিল্যান্ড ১৫টি, দক্ষিণ আফ্রিকা ১২টি, ভারত ও পাকিস্তান ১১টি, ইংল্যান্ড ১০টি, অস্ট্রেলিয়া ৬টি ও আফগানিস্তান একটি টেস্টের প্রতিপক্ষ ছিল।

দল হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার হার বেশি হলেও ক্রিকেটারদের দিক থেকে সাফল্যের হার ভারীই বলা চলে। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রান মুশফিকুর রহিমের। ৭০ টেস্টে করেছেন ৪৪১৩ রান। এই ক্রিকেটার ব্যাট হাতে ইতিমধ্যে তিনটি দ্বিশতকের দেখা পেয়েছেন। এরমধ্যে দুটি আবার উইকেটরক্ষক হিসেবে। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট দ্বিশতকটিও তাঁর। গলে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বর্তমানে টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২১৯* রানের স্কোরটিও মুশফিকের। এছাড়াও আরও দুটি টেস্ট দ্বিশতক আছে বাংলাদেশের। যে দুটির মালিক সাকিব আল হাসান (২১৭) এবং তামিম ইকবাল (২০৫)।

বল হাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত ৫৬ টেস্ট থেকে শিকার করেছেন ২১০ উইকেট। সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে ১০০’র বেশি উইকেট শিকার করেছেন আর মাত্র দুইজন। তারা হলেন মোহাম্মদ রফিক এবং তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং ফিগার তাইজুলের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৮ উইকেট। ম্যাচসেরা বোলিং ফিগারও এই বাঁহাতি স্পিনারের, ১২-১১৭।

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ১৫ বছর যতটা বন্ধ্যাত্বের মধ্যে কেটেছে, সেই চিত্র বদলানো শুরু করেছে গত ৩-৪ বছরে। বাংলাদেশ বড় বড় সব দলের বিপক্ষে জয় পেতে শুরু করেছে। আর তাই এই বছর সবচেয়ে বেশি ১০টি টেস্ট খেলার সুযোগ মিলেছিল বাংলাদেশের। তবে নিয়তির কী নির্মম পরিহাস। এই বছরই প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলতে পেরেছে মাত্র ২ ম্যাচ।

তবে নিশ্চয়ই শিগগিরই আবার সাদা পোষাকে মাঠে ফিরবে টিম টাইগার। অতীতের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আগামীর পথচলা হয়ে উঠবে আরও সুগম। জয়ের রঙে রাঙিয়ে তুলবে টেস্ট ক্রিকেটের অঙ্গন। সে সুদিনের প্রত্যাশার গল্প শুরু হোক আজ বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসের মর্যাদা প্রাপ্তির ২০ বছরের দিন হতেই।

Share this post

scroll to top