মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকার বই কিনবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বই কেনায় অনিয়মের প্রশ্ন তুলেছেন প্রকাশকরা। এদিকে দেশের বিশিষ্ট লেখকরা বই কেনায় স্বচ্ছতার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রকাশকরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক বই কেনা হচ্ছে, এগুলো মানসম্পন্ন হবে কি না সেটি নিশ্চিত নয়। একই সঙ্গে অধিকসংখ্যক প্রকাশক ও লেখকের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া জরুরি।
প্রকাশকদের দাবি, বই ক্রয়ের আগে সব সৃজনশীল প্রকাশকের বই জমা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ভাষা চিত্রের প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, করোনার সময়ে যেখানে মহাদুর্যোগ যাচ্ছে প্রকাশনা শিল্পে, সেখানে এ ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। এতগুলো বই কেনা হচ্ছে বিষয়টি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারত। এত বড় একটি প্রজেক্ট কয়েকজন প্রকাশকের মাঝে কুক্ষিগত হবে—বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে পর্যন্ত বিষয়টি যাক। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হোক, প্রত্যেক প্রকাশনী থেকে মান যাচাই সাপেক্ষে কিছু না কিছু বই ক্রয় করতে হবে, যেন কোনও সিন্ডিকেট থাকতে না পারে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির প্রথম সহ-সভাপতি খান মাহবুব বলেন, দেওয়া হয়নি কোনও দরপত্র বা বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু কেনা হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকার বই। কিনছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব বই কারা নির্বাচন করেছেন, কারা মূল্যায়ন করেছেন? বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার গড়ার জন্য অনেক বই থাকা সত্ত্বেও কেন মাত্র ৩০টি শিরোনামের বই ক্রয় করা হলো? কেন গুটিকয়েক বইয়ের প্রকাশকদের এত বড় বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হলো। এই বাজেট দিয়ে তো পুরো সৃজনশীল প্রকাশনা সেক্টরকে সামগ্রিকভাবে প্রণোদনা দেওয়া যেত এবং কমপক্ষে পাঁচশ শিরোনামের বই ক্রয় করা যেত। কেন উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সিঙ্গেল সোর্স পদ্ধতি গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ আর্থিক দায়মুক্তির পথ গ্রহণ করল? সব প্রকাশনীকে মান যাচাইয়ের ভিত্তিতে এর অংশীদার করতে হবে।
বই কেনায় স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে শিগগিরই এ ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিলের আবেদন জানিয়েছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবকে চিঠি দিয়েছে সমিতি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু বই নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিক নয়। শিক্ষার্থীর কাছে যে বই পৌঁছে দেওয়া হবে, তা মানসম্পন্ন হওয়া যেমন দরকার, তেমনি অধিকসংখ্যক প্রকাশক ও লেখকের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দিতে হবে। বই কেনার আগে সব সৃজনশীল প্রকাশকের বই জমা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কমিটির মাধ্যমে বই নির্বাচন করা অপরিহার্য। দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক, প্রকাশক, সরকারি কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি বই নির্বাচন কমিটি এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এই প্রক্রিয়াতেই বই কিনে। এমনকি আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই প্রক্রিয়াতেই বই নির্বাচন করে ক্রয় করেছে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু চিঠির কোনও জবাব এখনও পাইনি। বই কেনায় স্বচ্ছতার আহ্বান জানিয়ে ১৫ জন বিশিষ্ট লেখক বিবৃতি দিয়েছেন। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেব।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য বাংলা একডেমি, শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ ২২-২৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৭টি বইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া দেওয়া হয়েছে। শিশুদের উপযোগী করে এসব বই তৈরি।
তিনি বলেন, এখানে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার মতো কিছু ঘটেনি। সব নিয়ম মেনেই বই ক্রয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এরপরও প্রকাশকদের যদি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই থাকে তারা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন। বই কেনার প্রক্রিয়া এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। এটি উন্মুক্ত রয়েছে।