সব বলে দেওয়াতে ৫-১০ বছর নয় ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছি: সাকিব

বাংলাদেশ ক্রিকেটে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবে এসে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা। গত বছরের ২৯ অক্টোবর হুট করে আইসিসির পক্ষ থেকে সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যার মধ্যে এক বছরের স্থগিতাদেশ ছিল।

ক্রিকবাজের সঙ্গে অনলাইন আলোচনায় উঠে এসেছে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথাবার্তা। সাকিব সেখানে জানিয়েছেন, আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে দেখা হওয়ার নিজের বিস্তারিত সবকিছু জানিয়ে দেওয়াতে বড় শাস্তির হাতের থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। নয়তো ৫-১০ বছরের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনাও ছিল তাঁর। সাকিব আরও জানান, নিজের ভুল থেকে বড় এক শিক্ষাও পেয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাকিব পার করে ফেলেছেন ১৩-১৪ বছরের মতো। হয়েছেন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। জানেন, ক্রিকেটের এই চোরাগলিতে লুকিয়ে থাকে জুয়াড়ির থাবা। আর এসব থেকে বাঁচতে করেছেন দুর্নীতি থেকে বাঁচার অনেক ক্লাস। সেই সাকিব তিনবার জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়েও গোপন করা। কেন? সাকিব জানালেরন হালকা ভাবে নিয়ে ফেলেছেন বিষয়টিকে। এই ভুলের মাশুল গুনছেন এখন।

সাকিবের ভাষ্যে, ‘আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।’

সাকিব নিজের এমন ভুলের জন্য অনুতপ্ত জানিয়ে আরও যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।’

সাকিব জানিয়েছেন, তারকা হওয়ার কারণে অসংখ্য ফোন আসে তাঁর কাছে। অনেকে তাদের সংস্পর্শে আসে। আর তাই ওইভাবে আলাদা করে মার্ক করেননি সেই জুয়াড়িকেও। ভুলে গেছিলেন তিনি।

সাকিব বলেন, ‘দেখুন, আমরা হাজারও ফোনকল পাই, মেসেজ পাই, কয়টা আর মনে থাকে! একটা উদাহরণ আমি দিতে পারি, ওই লোকটি যখন শেষবার ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল, আমি জবাব দিয়েছিলাম, ‘সরি, কার সঙ্গে কথা বলছি?’ তার মানে, আমার মনেও ছিল না, কার সঙ্গে কথা বলছি। তার সঙ্গে আগে কথা বলেছি ২-৩ বছর আগে। ওই সময় আমি জানতামও না লোকটা কে, তার নম্বরও আমার কাছে ছিল না।’

তবে এই বিষয়গুলো হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় জানিয়ে সাকিব আরও বলেন, ‘যাই হোক, তারা যখন (আইসিসি দুর্নীতি দমন ইউনিট) তদন্ত করেছে, এসব তারা জানত এবং পরিস্থিতি বুঝেছে। তবে সত্যি বলতে, কারও উচিত নয় এসব হালকাভাবে নেওয়া। ওই ধরনের মেসেজ বা কল কারও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বা ওভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত নিরাপদে থাকতে হলে। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি, বড় শিক্ষা এটি।’

ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার, হার্শা এরপর সাকিবকে উদ্দেশ্য করে জানতে চান, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তিনি কোনো সংশয় ছাড়াই। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারও। নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগে গত বছর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন। আর কিভাবে সেটি সম্ভব হয়েছে?

সাকিব জানিয়েছেন, নিজের ওপর অতি আত্মবিশ্বাসও এক্ষেত্রে কাল হয়েছিল তাঁর জন্য। সাকিবের দাবি, এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই অনেক কিছু পাত্তা দিতে চাননি তিনি।

সাকিবের ভাষ্যে, ‘যেহেতু সবসময় বেশির ভাগ ব্যাপারই ঠিক করেছি, কখনও কখনও অ্যারোগেন্সি পেয়ে বসতে পারে। মনে হতে পারে, ‘কী আর হবে, কিছুই হবে না। আমি তো ভুল কিছু করছি না..।’ কিন্তু আইনের হিসেবে তো ভুল হচ্ছে। হয়তো নৈতিকতার দিক থেকে ভুল হচ্ছে না, কিন্তু আইন বা নিয়মের দিক থেকে ভুল হচ্ছে। অনেক সময় এটি মনে থাকে না। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমি কখনোই ভাবতে পারিনিৃ মাথায়ই আসেনি যে ভুল করতে পারি। পাত্তা দিতে চাইনি। সেই ভুলই আমি করেছি।’

Share this post

scroll to top