ড. কামাল হোসেনসহ নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দারুস সালাম থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী ঢাকা-১৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক। আজ রোববার দায়ের হওয়া ওই মামলায় তিনি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করেছেন।
মামলার এজাহারে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক লিখেছেন, তিনি ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, ড. রেজা কিবরিয়া, ঢাকা-১৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালামসহ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী ও জাতীয়তাবাদী দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ও দারুস সালাম, শাহ আলী, মিরপুর, রূপনগর থানার সাধারণ মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছিলেন। মূল ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় আকস্মিকভাবে তাঁদের ওপর হামলা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার নির্দেশে রামদা, ছুরি, চাকু, লোহার রড, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটাসহ শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রনি, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শুভ, দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. ইসলাম, নেতা মো. বাদল, মো. জুয়েল, শেখ ফারুক (টোকাই ফারুক), ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো সোহেল, দারুস সালাম থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ রাজন, সদস্য নাবিল খান, শাহ আলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জাকির, সাধারণ সম্পাদক সৈকত ও সদস্য শাওন হামলা চালান। সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক মামলার এজাহারে আরও লিখেছেন, সেদিনকার হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন এবং তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের চিকিৎসার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে দেরি হওয়ায় মামলা দায়েরে দেরি হয়েছে। এজাহারে তিনি জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানসহ (পঙ্গু হাসপাতাল) কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসাধীন আহত লোকজনের ব্যবস্থাপত্র এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার ছবি সংযুক্ত করেছেন।
সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক রোববার বলেন, ওই দিন যাঁরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান, তাঁরা বেশ আগেই প্রস্তুতি নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের উল্টোদিকে অবস্থান নিয়েছিলেন। পবিত্র একটি জায়গায় হামলা হলেও পুলিশ কিছুই করেনি। খুব সম্ভবত হামলাকারীদের পরিচয় জানায় পুলিশ আর এগোয়নি। পুলিশেরই উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। তারা অভিযোগ দায়েরের জন্য অপেক্ষা করেছে। মামলার পরও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে।
গত শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ড. কামালের বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি একজন সিনিয়র সিটিজেন (জ্যেষ্ঠ নাগরিক) এবং প্রখ্যাত লোক। এটি কাম্য নয়। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। যেভাবে ব্যবস্থা হয়, সেটা হবে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাঁরাও একটি আবেদন করেছেন। আমরা নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠাব। তারা যেভাবে রিপোর্ট দেবে, সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’
দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. যোবায়ের মামলাটির তদন্ত করছেন।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহাম্মদ বলেন, পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে জানানো হয়, কামাল হোসেনের গাড়িবহরের ৭/৮টি গাড়ি ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের গাড়িচালকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন।