শিরোনাম পড়ে অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন এই ভেবে, যে তামিমের ব্যাটে বাংলাদেশ অনেক বড় বড় প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে, সেই তামিম এখন জাতীয় দল নিয়ে কেন চিন্তা করছেন না। অবাক হবার কিছুই নেই। এই তামিম যে টাইগারদের ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল নয়! যাকে নিয়ে কথা বলছি, তিনি হলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিম।
চলতি বছর ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা ঘরে তোলে জুনিয়র টাইগাররা। এই বিশ্বকাপ জয়ে মাঠে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন জুনিয়র তামিম। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই বাঁহাতি ওপনার বিশ্বকাপ জয়ে রেখেছেন গুরুত্পূর্ণ ভূমিকা।
করোনার সময়ে দেশের ক্রিকেট আপতত স্থগিত। তাই বাধ্য হয়ে ঘরেই সময় কাটাতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। এসময় সঙ্গে কথা হলো তানজিদ হাসান তামিমের। ছোট ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।জানিয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তামিমকে নিতে হয়েছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। আমি বগুড়া এবং বিভাগীয় দলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৪-১৫-১৬ খেলেছি। সে সময় আমার পারফরম্যান্স তেমন ভালো ছিল না। ভালো খেলতে পারিনি। মোটামুটি একটা পারফরম্যান্স করেছিলাম। জাতীয় ক্যাম্পে ডাক পাইনি ভালো পারফরম্যান্স না করার কারণে। শেষবার যখন অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেললাম তখন হান্নান স্যার (হান্নান সরকার) আমাদের নির্বাচক ছিলেন। এরপর এক বছর ভালো খেলে রাজশাহীতে অনুশীলন করার সুযোগ পেলাম। তারপর ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে উত্তরা দলের হয়ে খেললাম। সেই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলাম। এরপরই অনূর্ধ্ব -১৯ দলে ডাক পাই।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সুযোগ পাওয়ার পর চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি বেড়ে যায় তামিমের জন্য। বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে। তবে তামিমের জন্য ইতিবাচক দিক ছিল বিশ্বকাপের আগে দেশের বাইরে সিরিজ খেলা। সেটা তার আত্মবিশাস আরও বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারটা আমার পারফরম্যান্স ভালো করতে অনেক সাহায্য করেছে। আমরা ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাতে তাদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছি। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন আমাদের কন্ডিশনের থেকে ভিন্ন। তাই তাদের দেশে খেলে আসাটাই আমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডকে বেশি ম্যাচ খেলার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে আমরা খুব সাহায্য পেয়েছি। আর মানিয়ে নেওয়াটা হয়েছে আরও সহজ। এই অভিজ্ঞতাগুলো ভবিষ্যতেও আমাকে অনেক সাহায্য করবে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই বাঁহাতি ওপেনার এখন নিজের ক্যারিয়ারটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। তবে তার চিন্তায় এখন জাতীয় দল নয়। বরং ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে মনোযোগী হতে চান তিনি। পাশাপাশি নিজের টেকনিক্যাল স্কিল আর ফিটনেস লেভেলটা আরও বাড়িয়ে তুলতে চান।
তামিম বলেন, ‘জাতীয় দলে খেলতে হবে এমন কোনোকিছু এখনও চিন্তা করিনি। বিশ্বকাপের পরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে (প্রস্তুতি) খেলেছি, বিসিএলে খেলেছি। আমরা বিশ্বকাপ জয় করে আসার পর ভালো একটা ছন্দে ছিলাম। কিন্তু এরপরে আর খেলার সুযোগই পেলাম না। কারণ করোনা ভাইরাসের জন্য সব খেলাধুলাই তো বন্ধ হয়ে আছে। বিশ্বকাপের পরে এখন পরবর্তী পরিকল্পনা থাকবে। যেহেতু অনূর্ধ্ব-১৯ লেভেল শেষ। এখন পরবর্তী পর্যায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সময়। স্কিল, ফিটনেসের দিকেই বেশি নজর দেবো। পরিকল্পনাটা সেভাবেই সাজাবো।’
তবে সিনিয়র তামিমের মতো জুনিয়র তামিমও তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে খেলতে চান। মানসিকভাবে নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করছেন তানজিদ হাসান তামিম।
তিনি বলেন, ‘আসলে প্রস্তুতিটা নির্ভর করছে কোন ফরম্যাটের ক্রিকেট সেটার ওপর। এখানে তিনটা ফরম্যাট। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য এক ধরনের পরিকল্পনা করতে হয় আবার লম্বা সংস্করণের জন্য আরেকভাবে পরিকল্পনা করতে হয়। আমি চাই, তিন ফরম্যাটের জন্যই নিজেকে তৈরি করতে। মানসিকতার কথা বললে বলবো, নিজেকে যতটা চাপমুক্ত রেখে তৈরি করা যায় সেভাবেই চেষ্টা করছি। সুযোগ এলে যেন সেটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি।’