রাজধানীতে বিজয় দিবস উপলক্ষে র্যালী করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। র্যালীর উদ্বোধন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি সরকারকে হুশিয়ারি করে দিচ্ছি, এই গ্রেফতার বন্ধ করুন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সব কিছু আপনাদের নিতে হবে। গণতন্ত্র ধ্বংস করার দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করবেন না, নির্বাচনকে এভাবে হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা-গুম করে নির্বাচন থেকে জনগনকে বিরত করতে পারবেন না।
মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সেই সাথে নিজে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিৎ ছিলো আমাদের আনন্দের উৎসবের।
কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভরাক্রান্ত। আমরা আতঙ্কিত, উৎকন্ঠিত দেশের গণতন্ত্র নিয়ে। যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন যে তফসিল দিয়েছেন, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার। ইতোপূর্বে আমরা কখনো এই ধরনের নির্বাচন দেখিনি। নজিরবিহীনভাবে তারা(সরকার) বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এমনকি প্রার্থীদেরকেও গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে না গণতন্ত্রের থাকবে, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে নাকি ফল ভোগ করবে না, বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়ে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যাবে নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই অন্যায়-অবিচার থেকে তাকে মুক্ত করতে পারবো কি পারবো না।
নির্বাচনের প্রচারনায় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন অভিহিত করে ফখরুল বলেন, একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। সে আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপরে গতকাল হামলা হয়েছে, তাকে প্রচারণা করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের এই র্যালী করতেও বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের র্যালী ছিলো ২টায়। সেটাকে তারা(পুলিশ) পরিবর্তন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এজন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিলো। তারপরও নানা বাধার মধ্যে যারা এই র্যালীতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সুব্রত চৌধুরী দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আপনারা সকলে অবগত আছেন, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন তারা জনগনের ভোটাধিকার হরণ করে আবারো ক্ষমতায় থাকার জন্য নীল নকশার ষড়যন্ত্র, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেই।
তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষ ও ১০ কোটি ভোটারের ওপর নির্ভর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগন ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয় করবে এই হলো আজকের বিজয় দিবসের আহবান।
এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।