মেয়েদের পোশাক কেমন হবে? এটা নির্ধারন করবে কে? শালীনতা বোধ দেশ কাল পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। এটা কোন মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করবার বিষয় নয়। একটা মেয়ে যে পোশাকেই রাড়ির বাইরে আসুক বা ভিতরে থাক সে যে বয়সেরই হোক না কেন সে যৌন নির্যাতনকারী পুরুষ কর্তৃক যৌন নির্যাতনের স্বীকার হবেই। কোন পুরুষ যখন যৌন নির্যাতনের জন্য কোন নারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তখন সেই নারীর পোশাক কেমন , সে দেখতে কেমন, তার হাঁটা বা চালচলন কেমন, তার বয়স কত, তার সামাজিক অবস্থান কী কোন কিছুই সে হিসাব করে না। তার মানসিকতা জুড়ে থাকে শুধুই তার জঘন্য প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার বাসনা। যে এই কাজ করে সে নারীকে সব সময় সেই চোখেই দেখে। হোক সে বোরখায় আবৃত্তা নারী বা জিন্স টি শার্ট পরিহীতা নারী।
বোরখা একটি বিশেষ পোশাক যা নারীর শরীরকে খুব যতনে ঢেকে রাখে। কতটুকু যতনে ঢেকে রাখে বোরখা একজন নারীকে? বোরখা কী একজন নারীকে নারী থেকে অন্য কোন প্রানীতে পরিনত করে যা দেখে কোন পুরুষের মনে হবে এটা কোন নারী না? নারীর শারিরীক গঠন দেখেই যদি কোন পুরুষের মনে লালসার জন্ম নেয় তবে কি এই সব পুরুষ মানুষ জাতি ভুক্ত। নারীর পোশাকে যদি তার শরীরের বাকঁগুলি বোঝা যায় তবেই নারীকে ভোগ করবার জন্য পুরুষ লালায়ীত হবে এটা কেমন মানসিকতার প্রকাশ ??
নারীকে দেখলেই পুরুষের চরিত্রের স্খলন ঘটে। এই হাস্যকর কথার উত্তরে কোন যুক্তি দাঁড় করাবার কোন ইচ্ছা আমার নেই। নারী পর পুরুষের সামনে যেতে পারবে না। এই যদি হয় ধর্মের বিধান তার মানে ধর্মই কি পক্ষান্তরে স্বীকার করে নিল না পুরুষ প্রজাতি মানব জাতি ভুক্ত নয়। আমার বাসায় আমার স্বামীর অনুপস্থীতিতে তার ভাই বা বাবা বা বন্ধু এলেন। আমি তার সামনে যেতে পারব না, তার সাথে কথা বলতে পারব না এটা কার জন্য অপমান জনক? একবার ভাবুন তো আপনি এক বাসায় অতিথি হয়ে গেলেন যে বাড়িতে সেই সময় শুধুই নারী সদস্যারা আছে আপনি একজন পুরুষ বলে আপনাকে দরজার বাইরে থেকে বিদায় নিতে হল এটা কি পুরুষ হয়ে জন্ম নেবার কারনে আপনার জন্য অপমান জনক নয়।
মধ্যপ্রাচ্যের মত কঠোর পর্দাপ্রথার দেশ গুলিতে কি ধর্ষনের স্বিকার মেয়েরা হয় না??
সেখানে কি অশালীন পোশাক দায়ী। আমরা কথায় কথায় অশালীন পোশাকের ধুঁয়া তুলে অপরাধীর পক্ষে অবস্থান করি।
আমাদের দেশের দরিদ্রজনগোষ্ঠীর দুইবেলা ভাত জ়োটেনা। তাদের নারীরা পর্দা করবে কি ভাবে? যার পেটে ভাত নেই সে কি পরনের কাপড়ের চিন্তা করে? পরনের কাপড়ের পর আসে পর্দার কাপড়ের চিন্তা। গ্রামের মহিলাদের মাঠে কাজ করতে দেখি, মাথার কাপড় সামলিয়ে তাদের কাজ করতে বেশ অসুবিধা হয়। এদিকে শাড়ি কোমরে গুজতে গুজতে উঠে গেছে হাঁটুর কাছাকাছি। এতে হাটতে সুবিধা। একজন কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল আমাদের নিচে কাপড় না থাকলেও চলবে কিন্তু মাথায় কাপড় না থাকলে স্বামী তালাক দেবে।
আমার বাসায় হুজুর আমার মেয়েকে কোরাণ শরিফ পড়াতে আসেন। একদিন আমার ডাক পড়ল। জিজ্ঞাস করে জানলাম বিষয় অত্যান্ত গুরুতর। আমার মেয়ে জিন্সের প্যান্ট পরে ওজু করে কোরাণ শরিফ পড়তে বসেছে। তাই আমার ডাক পড়েছে। আমার মেয়ের এ হেন অপরাধের কারনে আমাকে একটি কোরান শরিফের সম মূল্যের সদগা দিতে হবে। আমি হুজুরকে বললাম —আপনি আজ যান। পরে আমি যেদিন ডাকব সেদিন আসেন।
জিন্সের প্যান্ট পরে ওজু হবে না একজন নারীর এটা কেমন কথা আমার বোধোগম্য নয়। এই পোশাকটি কি অশালীন? হয়ত অনেকের কাছে। তবে আমার কাছে নয়। নারী আজ এগিয়েছে অনেক পথ। সেই পথ পাড়ি দিতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। চলন্ত বাসে একজন পুরুষ উঠতে পারে তার পোশাকের কারনে একজন মেয়ে পারে না এই পোশাকের কারনেই।
ওড়না না পরলেই পোশাক অশালীন এই মানসিকতা যাদের তাদের সাথে আমার মতের অনেক বিরোধ রয়েছে।
পোশাক একজন মানুষকে সুন্দর করে। তাই বলে সর্বত্র নারীর পোশাক একই রকম হবে এটা ঠিক নয়। অনেক কর্মক্ষেত্রেই নারী পুরুষ একই ধরনের পোশাক পরিধান করে। যেমন ডক্তার নিচে যাই থাক উপরে সবার একই রকম এপ্রন। উকিল উপরে সবার একই রকম কালো কোট, পুলিশ, আনসার। কিন্তু কারখানাগুলিতে দেখা যায় পুরুষের পোশাক আটশাঁট আর মেয়েদের পোশাক ঢিলাঢালা। আর্থাৎ ওড়না শাড়ি বোরখা। এই পোশাকটা যে কতটা বিপদজনক তা বলে বোঝারার নায়।
একটা ছেলে যদি প্যান্ট শার্ট পরে বিশ্ব বিদ্যালয়ে যেতে পারে একজন মেয়ে পড়লেই তা অশালীন হবে কেন?? কেন বলা হবে মেয়েটি উশৃংখল? কেন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলায় না? কেন আমরা তাদের আমাদের সহপাঠী ভাবতে পারি না। কেন ভাবি তারা যৌন আবেদনময়ী? একবারও কেন ভাবি না এই পোশাকটা মেয়েটিকে বাসে চড়তে সহায়তা করবে। দৌড়াতে যেয়ে ওড়না বা শাড়ি সামলানোর মত বিড়াম্বনায় পরতে হবে না। কেন ভাবি না যে এই পোশাকই পারবে মেয়েটিকে আমার সাথে শ্লোগানে মুখরিত মিছিলে আমার মুষ্ঠিবদ্ধ হাতটিকে আরও দৃঢ় করতে। তাকে তার পোশাকের বিড়াম্বনায় থাকতে হবে না। ব্যাস্ত রাখতে হবে না দুই হাত ওড়না সামলাতে বা শাড়িতে ঢাকা শরীরের কোণ অংশ বেড়িয়ে গেল কিনা সেই চিন্তায় তটস্থ থাকতে।